কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে বহাল রেখে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই গোটা রাজ্যে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এরপর জেলাপিছু মাত্র ১ কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এরপরই রাতের নাগাদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্যে ২২ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়। জানা গিয়েছে, বাংলয় ৬ কোম্পানি সিআরপিএফ, ৮ কোম্পানি বিএসএফ, ৪ কোম্পানি সীমা সুরক্ষা বল এবং ৪ কোম্পানি আইটিবিপির জওয়ান পাঠাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ১টি কোম্পানিতে থাকেন ১০০ জন জওয়ান ও আধিকারিক। তার মধ্যে ৮০ জনকে মোতায়েন করা যায়। বাকিরা জওয়ানদের রসদ ও খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত সপ্তাহেই এক নির্দেশ দিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছিল, রাজ্যের সর্বত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। তবে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই গতকাল শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। তবে সেখানেও ধাক্কা খায় রাজ্য। হাই কোর্টের রায়কে বহাল রেখে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় যে রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বিচারপতি বিভি নাগরত্না এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ভোটে কোনও ধরনের অশান্তি কাম্য নয়। অতীতে বাংলায় ভোটের সময় হিংসা দেখা গিয়েছে। এই অবস্থায় হাই কোর্ট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছিল। সেই রায়তে কোনও সমস্যা নেই।
বাহিনী মোতায়েন নিয়ে মামলার শুনানি চলাকালীন গতকাল বিচারপতি নাগরত্না রাজ্য কমিশনকে বলেন, 'এমনিতে আপনারা পঞ্চায়েত ভোটের জন্য পাঁচ রাজ্যের থেকে পুলিশ চেয়েছেন। এদিকে হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হলে তার খরচ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে। তাহলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?' এদিকে বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে কমিশনের আইনজীবী দাবি করেন, রাজ্যের পুলিশ যথেষ্ঠ দক্ষ। তবে সংখ্যায় পুলিশকর্মী কম থাকায় অন্য রাজ্য থেকে বাহিনী চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এই আবহে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হলে পরিকল্পনা বদল করতে হবে।' এদিকে রাজ্য কমিশনের আইনজীবী আজ শীর্ষ আদালতে দাবি করেন, 'মনোনয়ন পর্বে কমিশন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিমি পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল।' এদিকে রাজ্য কমিশনের যুক্তি খণ্ডন করে শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। যদিও এই আবহে মাত্র ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কমিশন আদালতের রায় নিয়ে প্রহসন করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। জেলা পিছু ১০০ জন জওয়ান কী বা করতে পারবেন। তবে কমিশনের আবেদন পেয়েই রাজ্যে বাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত হয়ে গেল অমিত শাহের মন্ত্রক।