পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে বোমা–গুলিতে কেঁপে ওঠে ভাঙড় বলে অভিযোগ বিরোধীদের। শুধু তাই নয়, ভাঙড়ে অশান্তির জেরে প্রাণ গিয়েছিল এক আইএসএফ কর্মীর। এবার নিহত আইএসএফ কর্মীর দেহ কবর দিতে উদ্যোগী হল তাদের দল। কিন্তু এখানেই দেখা গেল সৌজন্যের রাজনীতি। আইএসএফ কর্মীর দেহ কবরের সময় হাত বাড়িয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। এই এলাকাতেই বারবার দুটি দল সংঘর্ষে জড়িয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর পর হিংসার রাজনীতি ছেড়ে এক জায়গায় এলেন দু’দলের কর্মীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে এই সৌজন্যই দেখা গেল।
এই ভাঙড়ে হিংসার ঘটনার পর তা সরেজমিনে দেখতে এসেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি ক্যানিংয়েও যান। আর রাজভবনে ফিরে খোলেন হেল্পলাইন নম্বর। ভাঙড়–২ ব্লকে অশান্তি হয় মনোনয়ন–পর্বের শেষ দিনে। দু’পক্ষের সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন জয়পুর গ্রামের আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লা। তাঁর এই মৃত্যুর পিছনে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত আছে বলে তখন আইএসএফ দাবি করেছিল। এই আবহে শনিবার মহিউদ্দিনের দেহ কবর দেওয়া হয়। তখন চালতাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউদ্দিন মোল্লা মহিউদ্দিনের শেষযাত্রায় পা মেলান। কবর খোঁড়া থেকে শেষকৃত্য পর্যন্ত সাহায্য করেন।
কেন এমন করলেন তৃণমূল নেতা? এই ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছিল, কারও সঙ্গে মতপার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু তার জন্য যেন সৌজন্যের রাজনীতি নষ্ট না হয়। এই বিষয়ে রেজাউদ্দিন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য আছে। কিন্তু এই গ্রামে কারও কোন বিপদ হলে আমরা সবাই এক হয়ে যাই। মহিউদ্দিন আমার ভাইয়ের মতো। তাই তাঁর শেষকৃত্যে এগিয়ে এসেছি।’ গ্রামবাসীরা বলছেন, এটাই তো শুরু থেকে দেখতে চেয়েছিলাম। তাহলে প্রাণ যেত না কারও।
আর আইএসএফ কী বলছে? এই সৌজন্যতা দেখে তাঁরাও খুশি। এতটা তাঁরা ভাবতে পারেননি। তাই আইএসএফের ব্লক সভাপতি রাইনুর হক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের দলীয় কর্মীর মৃত্যুতে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী এগিয়ে এসেছেন। পাশে থেকে শেষকৃত্যের কাজ করেছেন। আমরাও তাঁকে পাশে পেয়ে খুশি। কারণ রাজনীতি হোক রাজনীতির জায়গায়। সেখানে সৌজন্য থাকবে না কেন? আমরা ওঁকে সাধুবাদ জানাই।’ মহিউদ্দিনের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর দাদা আব্বাস সিদ্দিকী।