তিনি এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আসলে বিজেপি তাঁকে টিকিট দিয়ে রাজনীতিতে নামিয়েছে। পরিচয় কৃষ্ণনগরের রাজবধূ তিনি। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হয়ে রাজবাড়ির অমৃতা রায় ‘রানিমা’ ডাক শুনছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে। কঠিন কাজ হলেও এখন অমৃতা রায় প্রার্থী। তাঁকে আবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করেন। তবে নির্বাচনে জয়–পরাজয় যাই হোক অমৃতার অন্য গুণ কিন্তু প্রকাশ্যে এসেছে। রাজবাড়ির ঐতিহ্য বজায় রেখেই বধূ অমৃতা রায় পোশাকশিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়েছিলেন। সেটা পেয়েছিলেন। তাই অনেকের কাছেই পৌঁছেছিল অমৃতা’জ ব্র্যান্ডের পোশাক।
এখন প্রার্থী হওয়ায় এইসব কথা বেরিয় আসছে। কথিত আছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে রাজবাড়িতে শুরু হয় দুর্গার রাজরাজেশ্বরী রূপের পুজো। দশমীর দিন এখানে বড় আকর্ষণ ছিল রানিমা। তাঁর সঙ্গে সিঁদুর খেলার সুযোগ মিলত। অমৃতাও দর্শনার্থীদের সঙ্গে সিঁদুর খেলেন। অনেকে রানিমার সঙ্গে সেলফি তোলেন। কেউ আবার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। এতকিছুর পরও পোশাক তৈরি বন্ধ করেননি অমৃতা রায়। এখনও তাঁর নকশায় তৈরি হয় মেয়েদের নানারকম পোশাক। এখন রানিমা নির্বাচনের ময়দানে নেমেছেন। হুগলির চন্দননগরের মেয়ে অমৃতা রায়। লেখাপড়া কলকাতায়। প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই পোশাকশিল্পী হয়ে ওঠা নিয়ে তিনি বলেন, ‘চিরকালই পোশাক তৈরির উপর ঝোঁক ছিল। নিজেও নানারকম জামাকাপড় পরতাম।’
আরও পড়ুন: ঢাকুরিয়া রেল লাইন সংলগ্ন ঝুপড়িতে বিধ্বংসী আগুন, শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় ট্রেন থমকে
পোশাক তৈরি দিয়েই শুরু হয় অমৃতা রায়ের ফ্যাশন চর্চা। তাঁর পোশাক অনেকেই প্রশংসা করতেন। আগ্রহ বাড়ায় শুরু করেন তিনি। বিয়ের পরে এই কাজ বেশি করে শুরু হয়। তাঁর দাদু, বাবা সকলেই ছিলেন বিচারপতি। সেই সূত্রে কলকাতার বালিগঞ্জে চলে আসা। রাজবধূর কথায়, ‘আমার বাবা কিশোর মুখোপাধ্যায় জনপ্রিয় বিচারপতি ছিলেন। দাদু সুধাংশুশেখর মুখোপাধ্যায়কে ‘টাইগার অফ ক্রিমিনাল ল’ বলা হতো। সংবিধান লেখার সময় তাঁর পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল।’ কিন্তু অমৃতার ঝোঁক ছিল ভাল পোশাক তৈরি করে নাম–যশ–খ্যাতি অর্জন করার। ফ্যাশন ডিজাইনার হিসাবে বিখ্যাত হতে চেয়েছিলেন। তাই পোশাকে লিখতেন অমৃতা’জ ড্রেস। ডেকর কনসালট্যান্টও ছিলেন তিনি। সাজাতেন নানা জায়গা।
তবে প্রতিভার এখানেই শেষ নয়। তিনি ভাল রাঁধেনও। আর রান্নার ক্ষেত্রেও পৃথক ভাবনা আছে তাঁর। স্বামীর চাকরির দৌলতে ১৫ বছর বিদেশে থাকতে হয়েছিল রাজবধূকে। সেই রান্নাকে অনেকে ‘ফ্যান্সি’ রান্না বলে থাকেন। কৃষ্ণনগরের প্রার্থীর বক্তব্য, ‘নতুন রেসিপি মাথায় এলে ‘ফ্যান্সি’ রান্না করি। আমি খুব খারাপ রান্না করি না।’ তাহলে কি রাজনীতিও শখে? উঠছে প্রশ্ন। তবে রাজনীতি তিনি শখে করছেন না বলেও জানান। মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে চান। সেটা রাজনীতিতে থেকে সম্ভব বলে তাঁর মত। তাই তো অমৃতা বলেন, ‘ভাল কাজের চেষ্টা করতে ক্ষতি কি।’