বছরের শেষলগ্নে মন খারাপ করা খবর টলিপাড়ায়। প্রয়াত ইন্ডাস্ট্রির নামজাদা সাউন্ড রের্কডিস্ট অনুপ মুখোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, গৌতম ঘোষ থেকে অতনু ঘোষ-একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন প্রয়াত শিল্পী। শুক্রবার ভোরে ইছাপুরের বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন অনুপ মুখোপাধ্যায়। এদিন সকাল ৬টা নাগাদ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন ৭০ বছর বয়সী সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার।
পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের কৃতী ছাত্র অনুপ মুখোপাধ্যায়। পড়াশোনা করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী, নাসিরুদ্দিন শাহের মতো তারকাদে সঙ্গে। সেখান থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মুম্বইয়ে দীর্ঘ সময় স্ট্রাগল করেছেন, এরপর নিজের শহরে ফিরে এনএফডিসিতে কাজ শুরু। অনুপ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই টলিপাড়ার রেকর্ডিং স্টুডিওতে বিবর্তনের জোয়ার এসেছিল। শব্দগ্রহণ অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রথম যাঁদের হাতে রূপ পেয়েছিল, সেই দলের অন্যতম অনুপ। সেই কিংবদন্তি সাউন্ড ডিজাইনারের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পরিচালকরা। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সিনেমার একটা যুগের অবসান।
কলকাতা দূরদর্শনে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন অনুপ মুখোপাধ্যায়। এই প্রতিভাবান শব্দশিল্পী এসআরএফটিআই (SRFTI)-এর ডিনের পদেও অসীন ছিলেন। কাহিনিচিত্র এবং তথ্যচিত্রে শব্দগ্রহণের জন্য চারবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফে সম্মানিত হয়েছেন।
‘ময়ূরাক্ষী’ খ্যাত পরিচালক অতনু ঘোষ এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অনুপদা’র স্মৃতিতে ডুব দিলেন। তিনি লেখেন, ‘অনুপ মুখোপাধ্যায়। বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমার শব্দ ঘিরে যে নামটা বেশ কয়েক দশক ধরে ওতপ্রোতভাবে জুড়ে আছে। চারবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ থেকে শুরু করে কত অসংখ্য পুরোনো-নতুন, নামী-অনামী নির্দেশকের ছবিতে কাজ করেছেন।আমিও তাদের মধ্যে একজন। পাঁচটা ছবিতে অনুপদার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। ভাবছিলাম, যা যা শিখেছি, তার মধ্যে কোনটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ?Where art ends… and pretension begins! হ্যাঁ, এটাই অনুপদার কাছে পাওয়া সবচেয়ে জরুরি শিক্ষা।’
পরিচালকের কথায়, মুখের উপর ভুল শুধরে দেওয়ার মানুষ ছিলেন অনুপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘অনুপদা বিরক্ত হয়েছেন - ‘কথাগুলো খুব জরুরি। দর্শক বুঝতে না পারলে cuttingটা শুধুই gimmick হয়ে থেকে যাবে!’ এমন করে সরাসরি মুখের ওপর বলে ভুল শুধরে দেওয়ার মানুষ কমছে। বাজারে কার নাম ফেটেছে, কে প্রভাবশালী, তার তোয়াক্কা না করে কাজের শেষে প্রতিদিন স্টুডিওর বাইরে অবধি এসে ‘সাবধানে যেও’ বলার মানুষও কমছে।’
হরনাথ চক্রবর্তীর একাধিক ছবির সাউন্ড ডিজাইনার ছিলেন প্রয়াত অনুপ মুখোপাধ্যায়। পরিচালক জানিয়েছেন, ‘আমার যত হিট ছবি অনুপ দার সঙ্গে। প্রতিবাদ, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ - সবই। আগে লুপ ডাবিং হতো, পরে রিল ডাবিং এল। অনুপ দা'র থেকে কাজ শিখেছি। কলকাতায় প্রথম ডিজিটাল মিক্সিং স্টুডিও তৈরি করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়, মৃনাল সেন একটা সময় অনুপ ছাড়া কাজই করতেন না। ওর চলে যাওয়াটা খুবই মর্মান্তিক।’
সন্দীপ রায়ের ‘নয়ন রহস্য’ ছবির ডাবিং শেষ করেছিলেন অনুপ। বাকিটা অসম্পূর্ণই রইল। না-ফেরার দেশে পারি দিলেন টলিউডের এই সুযোগ্য শব্দের কারিগর।