ব্যক্তিগত জীবন খোলা বইয়ের মতো বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অধ্যাপিকার সঙ্গে তাঁর আরেকটাও পরিচয় রয়েছে। আর সেটা হল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমিকা। সহবাস-সঙ্গী বললেও ভুল হয় না। আর এটা বলতে কখনও দ্বিধা করেন না বৈশাখী নিজেও। বরং স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দুটো মানুষ ভালোবেসে সহবাস করলে তার কাছে হার মানতে পারে অনেক বৈবাহিক সম্পর্কও। অবশ্য শুধু মুখেই বলেন না। করেও দেখান। তাঁর আর শোভনের মধ্যেকার বোঝাপড়া সেই কথারই প্রমাণ দেয় বারবার।
মনোজিতের সঙ্গে বিয়েতে সুখ পাননি! এখন যদিও ডিভোর্সি। তবে একটা সময় পার করে আসতে হয়েছে তাঁকে অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। শারীরিক থেকে শুরু মানসিক-- সব ধরনের হেনস্থার শিকার হয়ে একসময় বরের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে। একাধিকবার বৈশাখীর কথায় উঠে এসেছে সেই সময়ের স্মৃতি।
বৈশাখী মনে করেন তিনি ভালোবাসার কাঙাল। আনন্দবাজারকে বললেন, ‘আমাকে না খেতে দিয়ে রেখে দিতে পারো তুমি। কিন্তু না ভালোবেসে, অবহেলায় রেখে দিলে আমি না নিতে পারি না। আমার ভিতরের মানুষটা একশোবার মরতে শুরু করে।’
তবে মনোজিতের থেকে যে ভালোবাসা পাননি তা পেয়েছেন শোভনের কাছ থেকে। বিয়ের কয়েকমাসের মধ্যেই বরের ঘর ছেড়েছিলেন বৈশাখী। বাবার তাঁর জন্য কিনে রাখা ফ্ল্যাটে চলে যান সোজা। যদিও পরে ক্ষমা চান মনোজিত। ফের একবার একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। সন্তান নেওয়া নিয়েও ভুগতেন সেইসময় দ্বিধায়। মনে সন্দেহ ছিল মনোজিত পারবে না ভালো বাবা হতে। মাকে বলেছিলেন, ‘এত খারাপ বর, সে খারাপ বাবা হতে বাধ্য’। সেইসময় বৈশাখীর মার মেয়েকে পরামর্শ ছিল, ‘তুই কি সত্যিই বাবার ভরসায় সন্তান বড় করবি!’ এমনকী বৈশাখীকে মহিলা কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যানের কথাও বদলে দেয় বৈশাখীর চিন্তাভাবনা। যিনি বলেছিলেন, সব মা-ই একা মা। বাবারা পাশে থাকলেও, মায়েরাই একা হাতে বাচ্চা মানুষ করে। খুব কম ক্ষেত্রে অন্যথা হয়।
যদিও বৈশাখীর দাবি, মহুলের জন্মের পরেও বদলাননি মনোজিত। গায়ে হাত তোলাও বন্ধ হয়নি। শেষমেশ মনোজিতকে ছাড়েন। মেয়েকে নিয়েই চলে আসেন। অবশ্য এই সবই এখন অতীত। মনোজিত জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর পেয়েছেন শোভনের সাহচার্য। বাবার মতো আগলে রেখেছেন শোভন বৈশাখী-কন্যা মহুলকেও। এমনকী, মহুলকে দত্তক নেওয়ার কথাও ভেবে রেখেছেন। পালিতা কন্যার মেয়ের স্কুলের প্যারেন্ট টিচার মিটিংয়েও যান নিয়মিত।
বৈশাখী আর শোভন এখন চান বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে। সম্পর্ককে দিতে সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতি। মন থেকে অবশ্য একে-অপরকে স্বামী আর স্ত্রী করে নিয়েছেন আগেি। তবে রত্নার সঙ্গে ডিভোর্স না পাওয়া পর্যন্ত তা সম্ভব নয়।