গতবছর(২০২২) ১২ নভেম্বর কন্যা সন্তানের জন্ম দেন অভিনেত্রী বিপাশা বসু। বিপাশা ও করণ সিং গ্রোভারের মেয়ের নাম রাখা হয় দেবী বসু সিং গ্রোভার। বিপাশা-করণের ছোট্ট দেবী এখন ৯ মাসের। রবিবার নেহা ধুপিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে দেবীকে নিয়ে ভয়ানক কঠিন এক সত্যি কথা প্রকাশ্যে আনলেন বিপাশা। জানালেন মেয়ের অসুস্থতা নিয়ে জন্মানোর কথা।
কী হয়েছে ছোট্ট দেবীর?
বিপাশা জানান, সন্তান জন্মের পর তিনি জানতে পারেন তাঁর মেয়ের হার্টে দুটো ছিদ্র রয়েছে। অর্থাৎ জন্মসূত্রে ছোট্ট দেবী ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (ভিএসডি) ভুগছিল। যেকথা জানার পর ভেঙে পড়েন বিপাশা ও করণ। বিপাশা জানান, মাত্র ৩ মাস বয়সে তাঁদের মেয়ের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। এদিন নেহার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বিপাশা বসু।
বিপাশা বলেন, ‘মা-বাবা হিসাবে আমাদের এই যাত্রা অন্যান্য মা-বাবার থেকে অনেক আলাদা ছিল। আমার মুখে এই মুহূর্তে যে হাসি আছে এর আগে সেটা ছিল না, তখন সুখটাও আমার কাছে কঠিন ছিল। আমি চাই না, আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা আর কোন মায়ের সঙ্গে হোক। একজন নতুন মা হিসাবে মাত্র ৩ দিনের মাথায় আমি জানতে পারি যে... আমার মেয়ের হার্টে দুটি ছিদ্র রয়েছে, ও ওভাবেই জন্মেছে। আমি ভেবেছিলাম আমি এটা প্রকাশ্যে আনব না। তবে, আমি এটা বলছি কারণ পড়ে মনে হয়েছে আমার মতোই অনেক মা আছেন, যাঁরা আমাকে এই কঠিন যাত্রায় সাহায্য করেছেন। সেই মায়েদের খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল...।’
বিপাশা আরও বলেন, ‘ প্রথমে আমরা ভিএসডি কী তাও বুঝতে পারিনি। জানতে পারি এটা ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট... তখন আমাদের পাগলের মতো দিন কেটেছে। আমরা আমাদের পরিবারের লোকজনকেও এটা জানাই নি। কারণ কী হবে সেটা আমরা দুজনেই বুঝতে পারছিলাম না। আমরা বাবা-মা হওয়াকে উদযাপন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি আর করণ সব জেনে অসাড় হয়ে যাই। প্রথম পাঁচ মাস আমাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু দেবী প্রথম দিন থেকেই অসাধারণ। আমাদের বলা হয়েছিল, যে প্রতি মাসে এটি নিজে থেকে নিরাময় হচ্ছে কিনা তা জানতে আমাদের একটি স্ক্যান করতে হবে। তবে ওর হার্টের ফুটোটা বেশ বড় ছিল। আমাদের বলা হয় যে এটা সন্দেহজনক, তাই সুস্থ করতে গেলে ওর অস্ত্রোপচার করাতে হবে। সেটাই ওর জন্য ভালো। দেবীর যখন শিশুর বয়স মাত্র তিন মাস বয়স তখন ওর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়।’
এর পর কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বিপাশা। পরে বলেন, ‘আমি ভেঙে পড়েছিলাম,যেন একটা বড় বোঝা এবং কী করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না। কারণ কীভাবে অতটুক শিশুকে ওপেন হার্ট সার্জারি হতে পারে? স্বাভাবিকভাবেই কিছু ঘটবে। আমার মতো করেই যাঁরা ভাবেন, সেই মায়েদের জন্য কথাগুলো বলছি। তবে এটা নিজের থেকে ঠিক হয়নি। প্রথম মাস, দ্বিতীয় মাস, কেটে যায়, কিছুই হয়নি। যখন ওর সঙ্গে দেখা করি, হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলি। আমি প্রস্তুত ছিলাম, তবে করণ তখনও প্রস্তুত ছিল না। আমি জানতাম যে দেবীকে ঠিক থাকতেই হবে এবং আমার বিশ্বাস ছিল যে ও ঠিক থাকবে। হ্যাঁ, ও এখন ঠিক আছে কিন্তু কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল ওটা। আমি বলছি, কারণ কারোর সন্তানের সঙ্গে এমন ঘটলে উচিত সঠিক সময়ে অস্ত্রোপচার করে নেওয়া।’
বিপাশা বলেন দেযখন দেবীর বয়স তিন মাস, তখন ওই অস্ত্রোপচার করানো হয়, যেটা ছয় ঘন্টা ধরে চলে। দেবী যখন অপারেশন থিয়েটারে তখন আমার মনে হয়েছিল আমার জীবন স্তব্ধ। তবে অস্ত্রোপচার সফল হলে আমি অবশেষে স্বস্তি পাই, দেবী এখন ঠিক আছে।