গর্ভেই তৈমুরের গলায় আম্বিলিকাল কর্ড জড়িয়ে গিয়েছিল, তড়িঘড়ি সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন করিনা। এরপর মাতৃত্বের অনুভূতি যেমন মনোরম ছিল, তেমনই আতঙ্কেরও ছিল। করিনা জানিয়েছেন, বেডরুমের মধ্যে নগ্ন অবস্থায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ‘আমি ছিলাম ভীত, মোটা, ফোলা এবং ক্লান্ত’, ২০১৬ সালের সেই মুহূর্তের কথা মনে করলে আজও শিউরে উঠেন তিনি। অভিনেত্রী জানান, ‘আমি লক্ষ্য করেছিলাম আমার স্ফীত পেট, ডার্ক সার্কেল, সি-সেকশনের সেই ড্রেসিং ব্যান্ডেজগুলো….. আমার কী অনুভূতি ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না’।
গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতে ২১ বছর পার করে ফেলেছেন করিনা কাপুর খান। বলিউডের ফার্স্ট ফ্যামিলির কন্যে, নবাব পরিবারের পুত্রবধূ- সব কিছুর উর্দ্ধে উঠে নিজের পরিচয় তৈরি করতে সফল করিনা। প্রেগন্যান্সি কোনও ট্যাবু নয়, গোটা দেশের কাছে এই উদাহরণ পেশ করেছেন বেবো। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নায়িকারা ঘরে লুকিয়ে থাকবেন, শ্যুটিং ফ্লোরে যাবেন না, ব়্যাম্পে হাঁটবেন না- এই সকল মিথ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন করিনা।
দিন কয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছে করিনার 'প্রেগন্যান্সি বাইবেল'। সেই বইতে নতুন মায়েদের জন্য একগুচ্ছ উপদেশ দিয়েছেন করিনা, ব্যক্ত করেছেন নিজের প্রেগন্যান্সি জার্নি। সি-সেকশন নিয়ে জড়িয়ে থাকা ভ্রান্ত ধারণা থেকে সেই যন্ত্রণা, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সেক্সের প্রতি আগ্রহ হারানোর কথাও বইয়ের পাতায় কলমবন্দি করেছেন করিনা।
'প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে কেউ ঢেঁকুর তোলা বা পা ফোলা, কিংবা নিজেকে সেক্সি না লাগার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চায় না। আপনার চুল পড়ে যাবে, কিংবা ঘনঘন মুড সুইয়িং করবে, কখনও কখনও কথা বলতেই ইচ্ছা হবে না!', অকপটে জানান তৈমুর ও জেহ-র মা। ‘সেই জন্যই আমি সেক্সের কথা আমার বইতে উল্লেখ করেছি। বেশিরভাগ ভারতীয় মেয়েরা এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পায়, কিন্তু এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করাটা জরুরি’।
সম্প্রতি এক ব্রিটিশ দৈনিক-কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে করিনা জানিয়েছেন, জীবনে কোনওকিছুই অসম্পূর্ণভাবে করতে আগ্রহী নন তিনি। যদি কোনও কাজে তিনি হাত দেন, তবে নিজের সবটুকু উজাড় করে দেন। তৈমুরের জন্মের আগে কেন নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি? করিনা জানান, ‘বলিউড অভিনেত্রীরা যখন অন্তঃসত্ত্বা হন, তখন তাঁরা বাড়ির বাইরে আসেন না। কারণ নিজেদের ফিগার থেকে লুকস নিয়ে তাঁরা সচেতন হয়ে পড়েন। কারণ তাঁদের হয়ত গ্ল্যামারাস দেখাবে না, হয়ত তাঁদের দেহে মেদ জন্মে গিয়েছে, সেই দেখে মানুষ নানান মন্তব্য করবে, এইগুলো বিরাট বড় ট্যাবু ভারতে। তবে আমি ঠিক করেছিলাম, নিজের রাস্তা নিজেই তৈরি করব’।
বয়সে দশ বছরের বড়, দুই সন্তানের পিতা, তার উপর ভিন ধর্মের মানুষের প্রেমে পড়েছিলেন করিনা। ‘টশন’ ছবির সেটে শুরু হয় সইফিনার গল্প। সেই নিয়েও বহু কটূক্তি, সমালোচনার শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী। তবে তিনি দমে যাননি। ভালোবাসার মানুষের হাতটা শক্ত করে ধরেছেন। আজ সইফের সঙ্গে তাঁর সুখী গৃহকোণ। করিনা গড়গড়িয়ে বলেন, ‘যখন আমি সইফকে বিয়ে করি লোকে বলেছিল আমার কেরিয়ার শেষ, প্রোডিউসাররা আর আমায় কাজে ডাকবে না, কারণ বিবাহিত অভিনেত্রীদের বাজারে কদর নেই। সেই সময় এমন কোনও বিবাহিত অভিনেত্রী বলিউডে ছিলেন না, যাঁরা বিয়ের পর কাজ করে চলেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম যদি এটা আমার কেরিয়ারের ইতি হয়, তবে তাই হোক। কাজ পাব না বলে আমি ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করব না সেটা হয় না’।
এখন বলিউডের চির-পরিচিত ছবিটা অনেকটা পালটেছে। অনুষ্কা শর্মা, দীপিকা পাড়ুকোনের মতো বিবাহিত অভিনেত্রীরা চুটিয়ে কাজ করছেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তো হলিউডেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই পরিবর্তনের শুরুটা কিন্তু হয়েছিল বেবোর হাত ধরেই।