প্রায় সাত ঘন্টার ম্যারাথন সওয়াল-জবাবের শেষে বম্বে হাইকোর্ট সংরক্ষিত রাখল রিয়া চক্রবর্তী, শৌভিক চক্রবর্তী এবং মাদককাণ্ডে অভিযুক্ত অপর তিন অভিযুক্তের জামিনের আর্জি। এদিন জাস্টিট এস পি কোটওয়াল বেঞ্চে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শুনানি চলল এদিন। বুধবার সকাল ১১টায় শুরু হয় এই হাই প্রোফাইল মামলার জামিনের আর্জি।সওয়াল-জবাব পর্ব চলে সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিট পর্যন্ত।
রিয়া ও শৌভিক চক্রবর্তী ছাড়াও এদিন সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু মামলার সঙ্গে জড়িত মাদককাণ্ডের অপর তিন অভিযুক্ত স্যামুয়েল মিরান্ডা (সুশান্তের হাউজ ম্যানেজার), দীপেশ সাওয়ান্ত (সুশান্তের পরিচারক) এবং আবদুল বাসিত পরিহারের (অভিযুক্ত মাদক পাচারকারী) জামিনের শুনানি হয় বম্বে হাইকোর্টে।
নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর তরফে অভিযুক্তদের জামিনের তীব্র বিরোধিতা করা হয়। সওয়াল-জবাব পর্ব শেষে বিচারপতি জানান নিজের রায় সংরক্ষিত রাখেন। তিনি যোগ করেন- ‘আমি দ্রুত এই শুনানির রায় দানের চেষ্টা করব। তবে আপনারা যেমনটা জানেন এই মামলা অনেক গভীর এবং অনেক বিষয় আলোচনা করার দরকার রয়েছে। আপনরা সকলে ভালো সওয়াল-জবাব করেছেন'।
এনসিবির তরফে বম্বে হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করে আগেই পরিষ্কার জানানো হয়েছিল ‘রিয়া ও শৌভিক মাদক চক্রের অ্যাক্টিভ সদস্য, যাঁদের হাই সোসাইটির ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগ রয়েছে এবং মাদক পাচারকারীদের সঙ্গেও-তাই এঁদের জামিন দেওয়াটা তদন্তের গতিকে বাধাপ্রাপ্ত করবে’।
এদিন রিয়া ও শৌভিকের আইনজীবী তাঁর মক্কেলদের উপর এনডিপিএস আইনের ২৭ (এ) ধারা অরোপ করার বৈধতা নিয়ে সওয়াল করেন। সতীশ মানেসিন্ধে জানান- সুশান্তই একমাত্র মাদক সেবন করত। তাহলে সুশান্ত বেঁচে থাকলে তাঁকে অভিযুক্ত করা হত এনডিপিএস আইনের ২০ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হত। সেটা জামিনযোগ্য এবং সর্বোচ্চ সাজা হত ১ বছরের। তাহলে আমার মক্কেলদের বিরুদ্ধে কেন ২৭-এ ধারা আরোপ করা হচ্ছে?
যদিও মানেসিন্ধের এই দলিলের বিরোধিতা করে এনসিবির আইনজীবী জানায়-
‘রিয়া নিজের পার্টনার সুশান্তের ড্রাগ সেবনের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তা সত্ত্বেও উনি সেটি গোপন করেছেন। এবং এটি আশ্রয় দেওয়ার সমতুল্য হবে। নিজের বাড়িতেও উনি ড্রাগ সংগ্রহ করে রেখে দিতেন যা জঘন্য অপরাধ।যার জন্য অবশ্যই রিয়া ও শৌভিকের ক্ষেত্রে ২৭(এ) ধারা প্রযোজ্য। ওঁনার উচিত ছিল সুশান্তের ড্রাগ সেবনের বিষয়টি পুলিশকে জানানো। বিচারপতি জানতে চান না-জানানো কি আশ্রয় দেওয়া? জবাবে জানানো হয় ‘এই আইনে আশ্রয় অর্থ যে কোনওভাবে সাহায্য করা , যা তাঁরা করেছে’।
মানেসিন্ধে এই মামলার তদন্তের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গে টেনে এনসিবির জুরিসডিকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এনসিবির তরফে আদালতে জানানো হয়- সুশান্তের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি ও রায়দান হয়েছে। তার সঙ্গে এই মামলার যোগ কোথায়? এখানে জুরিসডিকশনের প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে? এনসিবি এই দেশের কেন্দ্রীয় মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাঁরা একটি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে,যেখানে প্রয়াত সুশান্ত সিং রাজপুতও জড়িত। তার মানে এই নয় সেই মামলার তদন্ত সিবিআই করবে, তারাও নিজে থেকে এই মামলার তদন্ত করতে আসেনি। আর সুপ্রিম কোর্ট নিজের রায়ে পরিষ্কার জানিয়েছে অভিযুক্তের তদন্তকারী সংস্থা বাছাইয়ের অধিকার নেই।
এখন তদন্তের খুব গুরুত্বপূর্ন সময় চলছে, এই মূহূর্তে এনসিবির পক্ষে প্রকাশ্যে আদালতে নিজেদের জোগাড় করা তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা সম্ভবপর নয়। তবে এই মামলাটি শুধু সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত নয়- বলিউডের মাদকযোগ নিমূর্ল করতেই এই তদন্ত। এনসিবি জানায়- ড্রাগ সমাজের সবক্ষেত্রে আছে- তবে ভুলে গেলে চলবে না তারকাদের দেশের যুব সম্প্রদায় তাঁদের অনুপ্রেরণা মনে করে। তার সেই যুব সমাজই দেশের ভবিষ্যত।