বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > Brahmastra Film Review: চকচকে VFX সর্বস্ব ছবির গল্পের বুনোট আলগা,সহায় ‘রালিয়া’র রসায়ন

Brahmastra Film Review: চকচকে VFX সর্বস্ব ছবির গল্পের বুনোট আলগা,সহায় ‘রালিয়া’র রসায়ন

মুক্তি পেল ব্রহ্মাস্ত্র

Brahmastra Film Review: চোখ ধাঁধানো ভিএফএক্স, রালিয়ার টানটান রসায়ন মুগ্ধ করবে। তবে অয়নের ছবি কিন্তু হৃদয়ে ধাক্কা দেবে না। ‘ব্রহ্মাস্ত্র পার্ট ওয়ান: শিবা’-র গল্পের বুনোট বড্ড আলগা! তাহলেও কেন হলে গিয়ে দেখতে হবে এই ছবি? 

এতদিন মার্ভেল সিরিজের ছবি দেখে ভারতীয় দর্শকরা আক্ষেপ করেছেন, এমন ছবি যদি বলিউডও তৈরি করত! তাঁদের আক্ষেপ খানিকটা হলেও মিটবে ‘ব্রহ্মাস্ত্র পার্ট ওয়ান: শিবা’ দেখে। ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনির সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল- এই নিয়েই বাঙালি পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। ছবির জন্য জলের মতো টাকা ঢেলেছেন প্রযোজক করণ জোহর। প্রি-প্রোডাকশন পর্ব মেটবার পর আগামী পাঁচ বছর ধরে এই ছবি তৈরি করেছেন অয়ন।

স্মরণাতীতকালে বেশ কয়েকজন ঋষি তপস্যার জোরে বেশ কিছু অস্ত্র পেয়েছিলেন। জলাস্ত্র,পবনাস্ত্র, অগ্নি অস্ত্র, বানরাস্ত্র, নন্দী অস্ত্র, এবং ব্রহ্মাস্ত্র সহ মোট সাত ধরনের অস্ত্র পান তাঁরা। এই অস্ত্রগুলো শুভ কাজে ব্যবহারের কথা জানিয়ে তার রক্ষাকর্তা হওয়ার শপথ নেন তাঁরা। এরপর কেটে গিয়েছে কয়েক যুগ, সেইসকল ঋষিদের উত্তরসূরীরা আজও এই অস্ত্রগুলো রক্ষা করে চলেছেন।

শুরুতে শিবা-ইশার প্রেম দিয়েই শুরু ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, পরে সেটি মোড় নেয় শুভ বনাম অশুভ শক্তির লড়াইয়ে। কখনও কখনও মনে হবে যেন আপনি ভিডিয়ো গেম দেখছেন। হিন্দু পুরানের সঙ্গে কল্প-বিজ্ঞানের মিশেল অয়নের এই ছবি, যার প্রাণভ্রমরা কিন্তু শিবা-ইশার এক অন্যরকম প্রেমের গল্প।

ছোটবেলা থেকেই অনাথ শিবা (রণবীর কাপুর) কিন্তু অদ্ভূত এক প্রাণশক্তিতে ভরপুর সে। বড় হয়ে ডিস্ক জকি-র পেশা বেছে নেয় শিবা। তবে খুব ছোট বয়সেই শিবার সঙ্গে আগুনের এক অদ্ভুদ সম্পর্ক। আগুন তাঁকে জ্বালায় না, কিন্তু কেন? এর মাঝেই প্রথম দর্শনে ইশার প্রেমে পড়ে শিবা। দুর্দান্ত ছন্দে এগোতে থাকে তাঁদের প্রেমের কাহিনি। কিন্তু গুরুজি (অমিতাভ বচ্চন)-র সঙ্গে শিবার সাক্ষাৎ বদলে দেবে সবকিছু। ‘ব্রাহ্মণশ’ (Brahmānsh) নামক এক গুপ্ত সমাজের নেতা অমিতাভ। ব্রহ্ম-শক্তির উপাসক এই সমাজ। তাঁর জন্মই হয়েছে ব্রহ্মাস্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসাবে এবং সে নিজে একটা অস্ত্র (অগ্নি), এই সত্যের মুখোমুখি অমিতাভের হাত ধরেই হবে শিবা। অন্ধকারের রানি জুনুন (মৌনি) সকল অস্ত্রের মধ্যে শক্তিশালী ব্রহ্মাস্ত্র নিজের দখলে আনতে চায়, যাতে এই দুনিয়ার উপর তাঁর হুকুম চলে।

অন্ধকারের রানির হাত থেকে তিন টুকরে ভাগ হয়ে থাকা 'ব্রহ্মাস্ত্র' রক্ষার জিম্মা রণবীরের অর্থাৎ শিবার উপর। আর সেই যাত্রাপথে তাঁর সঙ্গী ইশা (আলিয়া ভাট)। এই ছবির চিত্রনাট্যের বাঁধন কখন কখনও একটু বেশিই জটিল মনে হবে আপনার। পাশাপাশি ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট দীর্ঘ ছবি আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে পারে, এমনটা অস্বীকার করবার জায়গা নেই। ছবির প্রথমার্ধের ২০ মিনিট খুব অনায়াসে ছেঁটে ফেলতে পারতেন পরিচালক। রণবীর-আলিয়ার রোম্যান্স এই ছবির অন্যতম ইউএসপি। নিউ এজ সম্পর্কের গল্প বলতে ওস্তাদ ‘ইয়ে জওয়ানি হ্য়ায় দিওয়ানি’ বা ‘ওয়েক আপ সিড’ পরিচালক এখানেও নিজের মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন তা অস্বীকার করবার জায়গা নেই।

আরও পড়ুন-হাতকাটা ব্লাউজ,পাতলা শিফন শাড়িতে লাস্যময়ী পাওলি, এই ডিজাইনার শাড়ির দাম কত?

ছবির দ্বিতীয়ার্ধ অনেক বেশি টানটান। সেখানে ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে অনেক জটিল ধাঁধার জট খুলবে। চিত্রনাট্য খানিকটা জটিল হলেও ছবির ভিএফএক্সের কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়। বড় পর্দায় এই সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা না দেখাটা বড় মিস!

এবার আসা যাক ছবির বাকি চরিত্রদের কথায়, নাগার্জুন স্বল্প উপস্থিতিতেও নিজের জাত চিনিয়েছেন। অমিতাভ বচ্চন সাবলীল নিজ ভূমিকায়, মৌনি রায় চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বেশকিছু জায়গাতেই মৌনির অভিনয় দেখলে মনে হবে ‘ওভার দ্য টপ’। জুনুন হিসাবে আরেকটু পরিপক্কতা দরকার ছিল মৌনির। পাশাপাশি আলিয়া ও মৌনির চরিত্রটা আরেকটু দীর্ঘ হলেও ভালো লাগত। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’-এর মূল ফোকাস কিন্তু পুরোপুরিভাবেই রণবীর কাপুর। ক্যামিও রোলে শাহরুখকে দেখে মন ভরবে না ভক্তদের। পাশাপাশি ‘কেসরিয়া’ বাদে এই ছবির একটা গানও মনে রাখবার মতো নয়।

সবশেষে কেন দেখবেন ব্রহ্মাস্ত্র? এত বড়মাপের স্কেলে বলিউড ছবি রোজ রোজ তৈরি হয় না। ছবির ভিএফএক্সের কাজ মুগ্ধ করতে বাধ্য, অপর এক দুনিয়ায় আপনাকে নিয়ে যাবেন রণবীর-আলিয়া যা একমাত্র হলিউডের ছবিতেই দেখা যায়। উপরি পাওনা হিসাবে থাকছে, প্রথমবার রুপোলি পর্দায় ‘রালিয়া’র রসায়ন। তাহলে আর দেরি না করে সিনেমা হলে গিয়ে দেখে আসতেই পারেন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’।

বন্ধ করুন