ভারতীয় বিনোদন জগতে অন্যতম নামজাদা ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। দীপিকা পাড়ুকোন থেকে অনুষ্কা শর্মা কিংবা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া-সকল সুন্দরীর পছন্দের ডিজাইনারের তালিকায় এক্কেবারে উপরে থাকে এই বাঙালি ডিজাইনারের নাম। তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানেও সব্যসাচীর লহেঙ্গাতে ঝলমল করেছেন এই তিন বলি নায়িকা। ব্যক্তিগত জীবনকে লাইমলাইট থেকে দূরে রাখতেই ভালোবাসেন ৪৫ বছর বয়সী এই ডিজাইনার। তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মন খুলে কথা বললেন সব্যসাচী। শোনালেন নিজের মানসিক অবসাদ ও তার সঙ্গে লড়াইয়ের অজানা কাহিনি।
মানসিক অবসাদের সঙ্গে নিজের লড়াই প্রসঙ্গে সব্যসাচী লেখেন, ‘আজকের দিনে সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানসিক সুস্থতা, তবে খুব কম মানুষই এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন। একটু সচেতনতা আর একটু সহনশীলতা থাকলেই মানসিক অবসাদের বিষয়টিকে সামনে আনা যায়। কিশোর অবস্থাতেই আমাকে মানসিক অবস্থার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে দীর্ঘ সাত বছরের জন্য। এরপর আমার পোশাক নির্বাচনের ক্ষমতা আমাকেই এই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে শিখিয়েছে। আমাকে নিয়ে লোকে অনেক মজা করেছে কিন্তু আমি নিজের রাস্তায় অবিচল থেকেছি’।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সব্যসাচী জানান, মাত্র ১৭ বছরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ‘আমি মানসিক অবসাদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, ১৭ বছরে আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করি। যদিও সেটা ছিল একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা। আজকের দিনে আর সময়ে জীবন দ্রুত পরিবর্তনশীল, তাই মানসিক অবসাদ দিনে দিনে ঝাঁকিয়ে বসছে আমাদের সমাজে। অবসাদগ্রস্ত হওয়া নিয়ে লজ্জা পাওয়া বা ভয় পাওয়ার মতো কোন বিষয় নেই,এটা সাধারণ ব্যাপার’, জানান সব্যসাচী। তিনি আরও বলেন,‘নিজেকে খুঁজে বার করাটাই সবচেয়ে জরুরি। নিজের মনকে বুঝতে হবে। তুমি জীবনে কি চাও সেটা উপলব্ধি করাটা খুব দরকার। সৃজনশীল মানুষরা অনেক সময়ই বুঝে উঠতে পারেন না তাঁরা আদতে কি চান! আমি ভুল পথে চলছিলাম। আমি মেডিসিন নিয়ে,তারপর অর্থশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, আমি জানতামই না আমি ভবিষ্যতে কি করব’।
অবসাদকে কখনও নিজের সৃজনশীলতার কাছে জিততে দেওয়া চলবে না। নিজেকে অভিব্যক্ত করতে এবং অবসাদের সঙ্গে লড়াই করতে সব্যসাচীর বড়ো অনুপ্রেরণা ম্যাডানো।' চুলে কমলা রঙ করে, ছেঁড়া জিনসে সেফটিপিন লাগিয়ে আমি নিজেকে ব্যক্ত করা শুরু করি, যাঁর অনুপ্রেরণা ম্যাডানো', বলে তিনি জানান।
বছরের শুরুতে সব্যসাচীর এক ইন্সটাগ্রাম পোস্ট ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল নেটদুনিয়ায়। গ্রেট এক্সপেকটেশনের মিস হ্যাভিসমের একটি উদ্বৃতিসহ ডিজাইনার লিখিছিলেন , ‘অতি সাজগোজ করে বেশি জামাকাপড় পরিহিতা এবং চড়া মেক-আপ করা কোন নারীকে দেখলে বুঝবেন ভিতর থেকে তিনি রক্তাক্ত। দিনের পর দিন নিশ্চুপভাবে রক্তাক্ত হয়ে চলেছেন তিনি।অবসাদে ভোগেন তিনি। তাঁরও প্রয়োজন একটু যত্নের। আপনার ব্যক্তজীবন থেকে সময়বার করে তাঁর সঙ্গেও সময় কাটান। তৈরি করুন কিছু সুন্দর মুহুর্তের। তাঁরও প্রয়োজন একটু যত্ন আর ভালোাসার..... ’সব্যসাচীর এই ব্যক্তিগত মতামত অনেকেই ভালোভাবে মেনে নেননি। ফলস্বরূপ নেটিজেনদের ট্রোলিংয়ের শিকার হতে চলেছিল তাঁকে। শেষমেষ প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।
অতীতে মানসিক অবসাদ তাঁর জীবনের একটা বড়ো অংশ জুড়ে থাকলেও এখন আর মানসিক অবসাদে ভোগেন না তিনি। কারণ এখন তিনি লড়াই করতে জানেন। নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে সবকিছুকে জয় করতে জানেন। তা সত্ত্বেও কোন সমস্যা দেখা দিলে কি করেন এই ডিজাইনার ? সব্যসাচীর উত্তর,'আমি বাঙালি, স্বভাবতই আমি ভোজনরসিক। তাই ভালো খাবারই আমার সব সমস্যার সমাধান। আর একটু বেশি ঘুম আমাকে নতুন করে চাঙ্গা করে দেয়'।