একটা-দুটো নয়, এক টানা চোদ্দ বছর পর নেশা ও বর্তমান পেশা ছেড়ে পুরোনো পেশায় 'আমাজন অভিযান' পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২০০৬ সালে চিকিত্সার পেশাকে বিদায় জানিয়ে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়ায় পাকাপাকিভাবে চলে আসেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ইন্ডাস্ট্রিতেও অনেকের কাছেই তিনি পরিচিত ‘ডাক্তারবাবু’ হিসাবে। আমফান এবং মহামারী করোনায় বিধ্বস্ত সুন্দরবনবাসীর পাশে দাঁড়াতে ফের পুরোনো পেশায় কমলেশ্বর। সেই অঞ্চলে ক্যাম্প করে রোগী দেখলেন, পৌঁছে গেলেন প্রান্তিক মানুষগুলোর কাছে, যাঁরা এই দুর্দিনে বেসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকু পাচ্ছেন না।
মেটেখালি বাজার, সন্দেশখালি, রায়দীঘি এবং সুন্দরবনের বেশকিছু অঞ্চলে আয়োজিত ক্যাম্পে রোগী দেখছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের অর্জুন দাশগুপ্ত, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের ডাক্তার পূর্নব্রত গুন এবং কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের নাটকের দল ‘শৈলশী’র যৌথ উদ্যোগেই আয়োজিত করা হচ্ছে এই স্বাস্থ্য ক্যাম্পগুলো। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৮টি মেডিক্যাল ক্যাম্প আয়োজন করেছেন তাঁরা। যেগুলোর বেশিরভাগটিতে যোগ দিয়েছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
এই প্রসঙ্গে সুদীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে পরিচালক লেখেন,'…গত দশকে ঘূর্ণিঝড় 'আইলা' যেমন এই অঞ্চলের মানুষের ও অরণ্য-বাস্তুর ক্ষতি করেছিল (সেবার যদিও অনেক বেশি সংখ্যায় বাঁধ ভেঙেছিল - কারণ সেবার ঝড় এসেছিলো ভরা কোটালে), এই দশকেও ঘূর্ণিঝড় 'উম-পুন্' তছনছ করে দিয়ে গেছে এলাকার জনজীবন ও নিসর্গ বিন্যাস। এবং সবচেয়ে বড়ো চিন্তার বিষয় হলো, যখন বিশ্বজুড়ে 'করোনা প্যান্ডেমিক' - এর সংক্রমণ সার্বিকভাবে মানুষকে পর্যদুস্ত করছে ও দেশের তথা রাজ্যের অর্থনীতি অথৈ জলে তখন প্রকৃতি নিঃস্ব ভাতের পাতে ঝড় দিলো । তাতে এলাকার প্রান্তিক মানুষের দুর্দশা আজ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।….সব'কটা শিবিরেই এলাকার প্রান্তিক মানুষ এলেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন সহনাগরিক হয়ে । সংখ্যাটা বড়ো কথা নয় - এই উদ্যোগ, এই দর্শন, এই স্বতঃস্ফূর্ত সামাজিকতা - এই মানবতাই শেষ কথা'।
এই প্রসঙ্গে কলমেশ্বর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'করোনা আর আমফানের পর মানুষের পাশে চাইছিলাম। সেই কারণে আমি আমার বন্ধুদের এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সঙ্গে যোগদান করি হেলথ ক্যাম্পগুলিতে'।
সহকর্মীর এই উদ্যোগে গর্বিত পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তিনি ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন, ‘তোমাকে স্যালুট জানাই কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়…তোমার জন্য গর্বিত’। পরিচালকের পাসওয়ার্ড ছবির নায়িকা রুক্মিনী মৈত্র লেখেন,'প্রতিদিনই এই মানুষটার জন্য সম্মান বেড়ে যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (কমল দা) তুমি সত্যি মানুষ হিসাবে অনেক বড়ো মাপের…আমি গর্বিত যে আমি তোমাকে জানবার সুযোগ পেয়েছি'।
যদিও এত প্রসংশা পেয়ে একটু লজ্জিত এই গ্ল্যামার দুনিয়ার কথাকথিত কম কথার মানুষটি। তিনি সৃজিতের পোস্টের কমেন্ট বক্সে লেখেন, ‘আরে সেরম বিরাট কিছু নয়..আমি সিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকে একটু মাতব্বরি করছি’। কিন্তু এটা যে পুরোপুরি নিজেকে 'ডাউনপ্লে' করবার চেষ্টা তা পরিষ্কার জানিয়ে দেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।

এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ছিলেন। এরপর বহু সরকারি এবং বেসরকারি হাসাপাতালে কর্তব্যরত চিকিত্সকের ভূমিকায় পাওয়া গিয়েছে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। এখন মানবতার স্বার্থে ফের পুরোনো পেশায় ফেরা।থামছেন না তিনি.. আগামী রবিবার আবারও যাবেন হাসনাবাদে রোগী দেখতে।