আজ ২০ নভেম্বর, আরও একবার ফিরে এসেছে সেই দিন, সেই খারাপ স্মৃতি…। আজ থেকে ঠিক একবছর আগে এই দিনেই মায়ের কোল শূন্য করে চিরকালের জন্য বিদায় নিয়েছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই লড়লেও শেষটা আর পেরে ওঠেননি ঐন্দ্রিলা। তাঁর চলে যাওয়ার কষ্টটা অনেকের কাছে থিতিয়ে গেলেও যায়নি যাঁর কাছে, তিনি আর কেউ নন, ঐন্দ্রিলার মা, শিখা শর্মা। শিখা দেবী অবশ্য বিশ্বাস করেন ঐন্দ্রিলার আছেন। শিখা শর্মার কথায়, ‘ঐন্দ্রিলা আজ একবছর শারীরিকভাবে আমার কাছে নেই, তবে ও আছে আমার কাছেই, আমি অনুভব করি।’
তাঁর আদরের ‘মিষ্টি’ (ঐন্দ্রিলা) আর নেই। রয়েছে শুধুই স্মৃতি। চোখে জল নিয়ে শিখা দেবী (শর্মা) ধরা গলায় বললেন তিনি ভালো নেই। শিখা শর্মা হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানাচ্ছেন, ‘গত বছর নভেম্বরে এই সময় আমরা যে সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, প্রতিটা মুহূর্ত আমার চোখের সামনে ভাসে। অসুস্থ হোক, তবে প্রাণটা তো ছিল। আমরা আশায় ছিলাম, ও ফিরে আসবে। ও যেমন লড়াকু ছিল, তাতে মন বলত, ও ঠিক ফিরে আসবে।’
আরও পড়ুন-‘অরিজিৎ ফোন করেছিল…’ ঐন্দ্রিলার চলে যাওয়ার একবছর পার, শিখা শর্মাকে কী বললেন গায়ক?
আরও পড়ুন-'করণ জোহর ঘর ভেঙেছেন', কফি উইথ করণ-এ এসে বেফাঁস বরুণ, শুনে চেয়ার ছাড়লেন KJO
শিখা দেবী বলেন, ‘আমি এখন বহরমপুরে, কলকাতাতে নেই। আজ সকাল থেকে ২৫টা বৃক্ষরোপণ করলাম, কারণ মিষ্টির ২৫ বছর বয়স হয়েছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে, আমার নার্সিং স্কুলে বৃক্ষরোপণ করলাম। আর কিছু বনদফতরে মাধ্যমে করব। আর কিছু দুঃস্থ মানুষজনদের খাওয়াব, শীতবস্ত্র দান করব, পথ সারমেয়দের খাওয়াব, এই আর কী… আর কীই বা করব, সারাদিনটা ওঁর স্মৃতিতে কাটানো। ’
শিখা দেবীর কথায়, ১ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। সেদিনই মেয়ের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল শিখা শর্মার। ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে নিজের দুই পোষ্য বোজো ও তুতুনকে খাইয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। তার পর মায়ের সঙ্গে অনেক গল্পও করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। ঐদিনই নাকি শ্যুটিংয়ের জন্য গোয়ায় যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে নাহ, সেটা আর হল না, গেলেন হাসপাতালে, আর তারপর…। ১ তারিখ হঠাৎ ঐন্দ্রিলার হাত-পা পড়ে গেল, আর শুরু হয় বমি। তারপর থেকে মায়ের সঙ্গে আর কথা হয়নি ঐন্দ্রিলার।
এদিকে ৩১ অক্টোবর সব্যসাচীর জন্মদিনও তো হইহই করে পালন করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। অসুস্থ হলেও স্বাস্থ্য সচেতন ছিল তাঁর মেয়ে শিখা শর্মা জানাচ্ছেন, সব্যসাচী বাইরের খাবার খেতে ভালো বাসত বলে ঐন্দ্রিলা নাকি বকাবকি করতেন। শিখা দেবীর কথায়, ‘সব্য বলত বিয়ের পর আর খাব না। ২০২৩-এর ১২ মার্চ ওদের বিয়ের ঠিক হয়েছিল। সেদিন সেকেন্ড রবিবার ছিল। সবই এখন গল্প কথা হয়ে গেলো…। (গলা ধরে এল) তবে আয়োজন বিশাল কিছু করতাম না। শুধু রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে, খুব কাছের লোকজনকে খাওয়াতাম। সব্যসাচী নভেম্বরে বিয়ে করতে চেয়েছিল। ওর বাড়ির লোকও তাই বলেছিল। তবে ঐন্দ্রিলা বলল, না মা আমার চুলটা দু'মাসে আরও একটু বড় হয়ে যাবে, সুন্দর হয়ে তারপর সাজব। তখনই বিয়ে হবে। সুন্দর হয়ে তারপর সাজব। সেই মতোই সব ঠিকঠাক হয়েছিল।’
শিখা দেবী বললেন, ‘রাতে সব্যর সঙ্গে কথা হয়েছে, ও হোয়াটসআপে লিখেছে, সবই আছে কাকিমা, শুধু আমার মিষ্টিটা নেই…। সব্যর সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় আমি কলকাতায় গেলেই সব্য আসে আমার সঙ্গে দেখা করতে। ওঁরও কাজের চাপ থাকে, তবু আসে। গত বছর ওরও এইসময়টা যুদ্ধ চলছে।’
শিখা শর্মা বললেন, ‘আমার মনে হয় না সব্যসাচী ঐন্দ্রিলা ছাড়া আর কখনও কাউকে ভালোবাসতে পারবে, ওর কথায় কখনও আমার তেমন মনে হয়নি…। থাকুক ও, মিষ্টিকে বুকে নিয়েই বেঁচে থাকুক…।’