স্টুডিওর ঘরে অপেক্ষমান। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। তারই মাঝে তিনি এলেন। কে? ‘রানি রাসমণি’র ভূপাল চন্দ্র বিশ্বাস। থুড়ি ‘অগ্নিপরীক্ষা’র কিরীটি। মানে বিশ্বাবসু বিশ্বাস। এসেই এক গাল হাসি দিয়ে শুরু করলেন আলাপচারিতা।
কেমন আছেন?
বিশ্বাবসু: এই তো বেশ ভালো। আমি সবসময়ই ভালো থাকি।
সাহিত্যের সেরা সময়ের অগ্নিপরীক্ষার কিরীটির জন্য কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
বিশ্বাবসু: আমি যেহেতু সাহিত্যের ছাত্র তাই সাহিত্য নিয়ে কোনও কাজ হলে আমার বেশ সুবিধাই হয়। রানি রাসমণির সময় থেকেই ভারী বাংলায় সংলাপ বলার অভ্যাস তো ছিলই। এছাড়া উত্তম কুমারের কালজয়ী সিনেমাটা তো আছেই। ওখান থেকেই শিখেছি। চরিত্রটাকে উনি কীভাবে অ্যাপ্রোচ করেছিলেন সেটা বুঝতে চেয়েছি। তবে আমার জন্য মূল রেফারেন্স কিন্তু ছিল উপন্যাসটা। এছাড়া বাকি টুকটাক স্ক্রিপ্ট আর আমাদের পরিচালক বিজয় জানা সাহায্য করেছেন।
যে উপন্যাস নিজে পড়েছেন, সেই উপন্যাসে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? কোনটার প্রভাব বেশি পড়ে?
বিশ্বাবসু: দেখুন, লেখা আর অডিও ভিজ্যুয়াল দুটো তো আলাদা মাধ্যম তার প্রভাবও আলাদা হয়। কোনটা বেশি কোনটা কম বলতে পারব না। তবে দুই রকমের প্রভাব অবশ্যই পাওয়া যায়। তবে যেটা বলতে পারি এই উপন্যাস নিয়ে দীর্ঘদিন পর আবার এভাবে কাজ হল। সেটার একটা প্রভাব অবশ্যই পড়বে। তাছাড়া কী বলুন তো, কিছু কিছু উপন্যাসের কিছু এমন চরিত্র থাকে যা পড়ে মনে হয় এটা যদি আমি করতে পারতাম তাহলে কেমন হতো? এই চরিত্রটাও ঠিক তাই।
যে চরিত্রে উত্তম কুমারকে দেখা গিয়েছে, সেই চরিত্র করার আগে ভয় লাগেনি?
বিশ্বাবসু: না। নিজের উপর কোনও চাপ রাখিনি। তাঁর থেকে শিখেছি। একই সঙ্গে নিজের মতো করে চরিত্রটাকে জাস্টিস দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
পর্দার কিরীটি কতটা ভালোবাসা পাচ্ছে মানুষের থেকে?
বিশ্বাবসু: (একটু হেসে) এতটা আশা করিনি। আমি অনেক দোলাচল নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তবে চমৎকার ফিডব্যাক পাচ্ছি। সব থেকে বড় কথা কেউ তুলনা করেননি। উল্টে বলছেন তোমাদের জন্য আবার সাহিত্যের সেরা সময় দেখা শুরু করলাম। এটা অনেক বড় পাওনা। আর তাছাড়া এটা তো ট্রোলিংয়ের যুগ, সেখানে দাঁড়িয়ে ট্রোল্ড না হওয়াটাও একটা বড় পাওয়া বলতে পারেন। (জোরে হেসে ওঠেন অভিনেতা।)
মাঝে তো বিস্তর গুজব ছড়িয়েছিল দিতিপ্রিয়া ওরফে রানি রাসমণিতে আপনার দিদার সঙ্গে প্রেম করছেন।
বিশ্বাবসু: দেখুন, যাঁদের পর্দায় দেখা যায় তাঁদের নিয়ে মানুষের বরাবরই কৌতূহল একটু বেশিই থাকে। তাঁদের ব্যক্তি জীবনে কী হচ্ছে, কার সঙ্গে ছবি দিচ্ছে সবটা নিয়েই চর্চা চলে। ফলে এখানে দাঁড়িয়ে একটা গল্প তৈরি হওয়ার সুযোগ তো থাকেই।
দিতিপ্রিয়া আদতে কতটা ভালো বন্ধু?
বিশ্বাবসু: আমরা সত্যিই খুব ভালো বন্ধু। এটা নিয়ে আমরা তখন ভীষণ হাসাহাসি করতাম।
বন্ধুরা সবাই OTT -তে চুটিয়ে কাজ করছেন। আপনার পরিকল্পনা কী?
বিশ্বাবসু: আমার তো ভীষণ ইচ্ছে। তার মানে এই নয় যে সিরিয়াল বা সিনেমায় কাজ করব না। কিন্তু OTT কী হয় বলুন তো, সিরিয়ালের মতো দীর্ঘ না হলেও অনেকটা বেশি সময় নিয়ে একটা চরিত্র তৈরি করা যায়। সুযোগ পাওয়া যায় একটা ভালো চরিত্র উপহার দেওয়ার। আর মানুষ তো এই মাধ্যমটা এখন বেশ পছন্দ করছেন।
অভিনয়ে আসা কীভাবে?
বিশ্বাবসু: থিয়েটার থেকে। আমি নাটক শিখেছি। তবে আমি প্রাথমিক ভাবে কিন্তু পর্দার পিছনেই থাকতে চেয়েছিলাম। সেই জন্যই আমি ফিল্ম স্কুলে ভর্তি হই। আমি কখনও ভাবিনি ক্যামেরার সামনে অভিনয় করব। সবসময় ভাবতাম এই জগৎটা অনিশ্চিত। অন্য কিছু বাছতে হবে। সেই জন্যই এডিটিং নিয়ে পড়াশোনা করি। এরপর আমার পড়াশোনা যখন প্রায় শেষের পথে তখনই রানি রাসমণিতে সুযোগটা এল। একই সঙ্গে একটা খেলার চ্যানেলে ক্যামেরার পিছনে কাজ করার সুযোগ এসেছিল। তার পর এটা বেছে নিই। দেখতে দেখতে ২ বছর রানি রাসমণিতে কাজ করতে গিয়ে এই জগৎটাকে ভালোবেসে ফেলি।
কাজের ক্ষেত্রে ভালোবাসা থাকলে জীবনে বিশেষ কেউ?
বিশ্বাবসু: (হো হো করে এক চোট হেসে বলেন) না। এখন প্রেম করছি না। তবে এলে দেখা যাবে।
অর্থাৎ, হ্যাপিলি সিঙ্গল হলেও মিঙ্গল হওয়ার জন্য প্রস্তুত?
উত্তরে কেবল তাঁর চিরাচরিত হাসিটা উপহার দিলেন।