মিথ্যা মাদক মামলায় ফেঁসে শারজার জেলে ঠাঁই হয়েছিল বলিউড অভিনেত্রী ক্রিসন পেরেইরা (Chrisann Pereira)-র। চার মাস পর বৃহস্পতিবার রাতে মুম্বই ফেরেন অভিনেত্রী। নিঃসন্দেহে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে ক্রিসনের গোটা পরিবার। গত এপ্রিল মাসে ক্রিসনের গ্রেফতারির খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর শারজা জেলে গত ২৬ দিন ধরে বন্দি ছিলেন সড়ক ২ অভিনেত্রী। জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর বেকসুর খালাস পান ক্রিসন, কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়ায় সে দেশেই আটকে ছিলেন অভিনেত্রী।
বোরিভালির বাসিন্দা ক্রিসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি মাদকপাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু মুম্বই পুলিশের তৎপরতায় রক্ষা পান ক্রিসন। দেশে ফিরেই মুম্বই পুলিশ কমিশনার বিবেক ফানসালকর এবং মুম্বই পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের ধন্যবাদ জানালেন অভিনেত্রী।
হিন্দুস্তান টাইমসকে ক্রিসন জানান, ‘আমি খুব খুশি দেশে ফিরে। আমি এখন সুরক্ষিত বোধ করছি, পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আমি খুব খুশি। আমি জানি না আমার ভাগ্যে কী রয়েছে, তবে আমার বিশ্বাস আমি যখন এই লড়াইটা জিততে পারি, তাহলে সব সমস্যার মোকাবিলা করতে সফল হব’।
গত কয়েক মাস ক্রিসনের জীবনের এক দুর্বিসহ অভিজ্ঞতা। শারজার জেলের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠেন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, ‘ওটা ভয়ঙ্কর সময় ছিল। আমার মতো কারুর সঙ্গেই দেখা হয়নি সেখানে, লোকজন লেখানে ড্রাগের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল, কেউ ড্রাগ চক্রের সঙ্গে যুক্ত, কেউ আবার নিজেরাই মাদকচক্রের মাথা… আমি একদম অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিলাম, বুঝতেই পারছিলাম না আমার সঙ্গে কী ঘটছে। আমার কাছে ওটা একটা অজানা জগত। গোটা পরিস্থিতি আমাকে হতভম্ব করে দিয়েছিল। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম, কেউ আমার সঙ্গে কেন এমনটা করল?’
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আশা হারালেই সব শেষ! কীভাবে লড়াই চালিয়ে গেলেন ক্রিসন? তাঁর কথায়, ‘প্রতিদিন আমি নিজেকে বলতাম, আজকের দিনটা পার করতে হবে… ঘুম থেকে উঠেই এই প্রতিজ্ঞা করতাম। ১৭ দিন পর যখন বাবা-মা’র সঙ্গে কথা হল, মনে বল পেয়েছিলাম। জেলে কয়েকজন ছিল তাঁদের সঙ্গে আমার কথা হত, আমি শরীরচর্চা করতাম, যাতে আমার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। আমি জেলের মধ্যে কোনওরকম মিউজিক ছাড়াই নাচ করতাম, হেরে যাইনি'।
২৭ বছর বয়সী অভিনেত্রী মেনে নেন এই পরিস্থিতি শারীরিক এবং মানসিক দুই দিক থেকেই যথেষ্ট উদ্বেগজনক ছিল। রাতের পর রাত স্ট্রেস নিয়েই কেটেছে। তবে দুঃস্বপ্নের এই স্মৃতি আঁকড়ে ধরে থাকতে চান না ক্রিসন। দ্রুত কাজে ফিরতে আগ্রহী তিনি, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চান অভিনেত্রী।
এর আগে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, জেলের মধ্যে ডিটারজেন্ট পাউডার টাইড দিয়ে চুল ধুতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এমনকী টয়লেটের জল দিয়ে কফি বানিয়ে খেয়েছেন। জানা যায়, দুবাইতে ক্রিসনকে অডিশনে পাঠানোর নামে ফাঁসানো হয়েছিল। গোটা চক্রান্তের মাস্টারমাইন্ড ক্রিসিনের অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা অ্য়ান্টনি পল।
মুম্বই পুলিশের তরফে আগেই জানানো হয়েছে, লকডাউনের সময় ক্রিসনের মা প্রমিলার পোষা কুকুর অ্যান্টনি পলকে কামড়ানোর চেষ্টা করে, তখন তিনি রেগে গিয়ে কুকুরটিকে মারতে একটি চেয়ার তুলেছিলেন। যে ঘটনায় বিরক্ত প্রমিলা অ্যান্টনিকে সকলের সামনে অপমান করেন। তারই প্রতিশোধ নিতে সম্ভবত অ্যান্টনি পল এমন কাজ করেছেন।