বাঙালির অতি প্রিয় ও পছন্দের গায়িকা জোজো মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ তিন দশক ধরে বাংলা গানের দুনিয়ায় পরিচিত নাম তিনি। তাঁর দাপুটে গলার জাদুতে বুঁদে আট থেকে আশি। কিন্তু আচমকাই মেজাজ হারালেন তিনি, এই রাগের পিছনে রয়েছে যুক্তিসঙ্গত কারণ!
পান থেকে চুন খসলেই আজকাল ট্রোলের মুখে পরেন সেলেবরা। অনেক সময় অকারণেও কটাক্ষের মুখে পড়েন তাঁরা। বাদ নেই জোজোও, সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়েও নিয়েছেন তিনি। তাঁর ওজন নিয়ে আকছার মন্তব্য ভেসে আসে। কেউ তাঁর বয়স নিয়ে কটূক্তি করে ‘মাসি’, কিংবা ‘ঠাকুমা’ বলেন। এগুলো সেলেব্রিটিদের জীবনের অংশ বলেই মেনে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু গায়িকা হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন মা। তাই সন্তানের ট্রোলিং সহ্য করতে পারলেন না তিনি। ফুঁসে উঠলেন ক্ষোভে।
দিন কয়েক আগেই চার বছরে ছেলে আদির সঙ্গে একটি মিষ্টি ভিডিয়ো ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। সেই ভিডিয়োর ভিউ সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। তাতে ভালোবাসার পাশাপাশি বিদ্রুপ ধেয়ে এসেছে। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, শো-তে যাওয়ার আগে সাজতে ব্যস্ত জোজো। মায়ের মেকআপ-এর সামগ্রী হাতে নিয়েছে আদি। জোজো জানতে চান, এগুলো কী? আধো গলায় জবাব আসে, ‘মেক আপ’। এই সহজ-সরল ভিডয়োর কমেন্ট বক্সে এক মহিলা লেখেন, ‘ভালো বাড়ির ছেলে দত্তক নিতে পারতে, মানায়নি’।
জোজা কড়া ভাষায় বলেন, 'আমি ভালো বাড়ির ছেলে নিয়েছি না খারাপ বাড়ির ছেলে নিয়েছি, তাতে আপনার কী? আপনি খাওয়াচ্ছেন? আপনি পরাচ্ছেন?… আপনি বলার কে। আমি জানি না ওঁনার সন্তান আছে কিনা, এত বড় মহিলা হয়ে ওঁনার জ্ঞান থাকা উচিত, দত্তক নেওয়ার সময় কেউ বেবিকে বেছে নিতে পারে না। আপনার বাচ্চাকে আমির খানের মতো দেখতে না হলে আপনার বাচ্চা নয়, বেচে দেবেন বাজারে? স্বামী হৃতিক রোশন না হলে চুমু খাবেন না? হ্যান্ডসাম লোকের সঙ্গে সম্পর্ক করবেন?
আপনাদের মতো মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলাদের জন্য বাকি মায়েরা বদনাম হন। আমরা দেখতে পাই মা তাঁর সন্তানকে খুন করছে। কোনও মা তার বাচ্চাকে চাকরের মতো খাটাচ্ছে। মা শব্দটার সংজ্ঞা বদলে দিয়েছেন আপনাদের মতো মহিলারা। আমি যদি শিল্পী না হতাম, আপনার মতো মানুষের জিভ টেনে ছিঁড়ে দিতাম আমার সন্তানকে এই কথা বলার জন্য। আপনার মতো মানুষদের কলসি বেঁধে ডুবে মরা উচিত। আপনারা সমাজের কলঙ্ক। আমি মিস জোজো না হলে আপনার জিভ টেনে ছিঁড়ে দিতাম।'
শেষে গায়িকা যোগ করেন, ভবিষ্যতে তাঁর সন্তানদের নিয়ে ফেসবুকে কুরুচিকর মন্তব্য করলে তিনি ছেড়ে কথা বললেন না। তিনি মনে করান, ‘যদি ভাবেন আমি হুমকি দিচ্ছি, তাহলে হ্যাঁ দিচ্ছি। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব’।
ট্রোলাররা এত কিছুর পরেও পালটাবে না, বদলাবে না তাঁদের মানসিকতা। আক্ষেপও ঝরে পড়ে জোজোর গলায়। তিনি বলেন, ‘জীবনে সব কিছু ছেড়ে দেওয়া যায়, জানি তাঁরা (ট্রোলাররা) মানসিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু একটা তো প্রতিবাদ দরকার। মৌলিক হোক বা শারীরিক, কোনও বাচ্চাকে এরকম বললে চাইল্ড কমিশনে যাওয়া উচিত। আমি চাই যারা আমাকে ভালোবাসে তাঁরা এগুলো দেখুক, জানুক।’
জোজোর ছেলের নাম আদিত্য জে মুখোপাধ্যায়। ২০১৯ সালে এক পুত্রসন্তানকে দত্তক নিয়েছেন জোজো। গায়িকার বছর ২৭-এর এক মেয়েও রয়েছে। একরত্তিকে আদিকে জন্ম দেওয়ার পরই তাঁর মা মারা যায়। গায়িকার শো চলাকালীন পরিচিত একজন ফোন করে তাঁকে সদ্যোজাতর পরিস্থিতির খবর দেয়। ছুটে যান জোজো। তারপর আইনত আদিত্যকে দত্তক নিয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই সন্তান দত্তক নেওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর, আদি সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে।