বিতর্ক দু'জনেরই নিত্যসঙ্গী। আরও একটা মিল রয়েছে এই দুই বাংলাদেশি তারকার। দাম্পত্য সুখ থেকে বঞ্চিত তাঁরা। তিনবার বিয়ে করেও কোনও স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার করা হয়নি তসলিমার, অন্যদিকে পরীমনির পঞ্চম বিয়ে ভাঙনের মুখে। এর মাঝেই পরীমনিকে লম্বা চাওড়া উপদেশ বাণী দিলেন তসলিমা নাসরিন। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও ঢালিউড হিরোইন পরীমনিকে নিয়ে চিন্তা জাহির করতে দেখা গিয়েছে তসলিমাকে।
দু-দিন আগেই স্বামী শরীফুল রাজকে ছাড়াই ধুমধাম করে ছেলে রাজ্যর প্রথম জন্মদিন সেলিব্রেট করেছেন ‘একা মা’ পরীমনি। পাশাপাশি আজকাল আর ছেলেকে রাজের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা নামে ডাকেন না পরীমনি। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাজ্যর নতুন নাম দিয়েছেন ‘পদ্মফুল’ ও ‘পুণ্য’। সেই প্রসঙ্গ তুলেই ফেসবুকে তসলিমা লেখেন- 'ঠিক এক বছর আগে লিখেছিলাম ... স্বামীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে বাচ্চার নাম রাখাটা বিশেষ পছন্দ হয়নি। স্বামীট্বামীরা আজ আছে, কাল নেই। সন্তান তো চিরদিনের। পরী তাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে সুন্দর একটি বাংলা নাম রাখতে পারতেন। পরীর জায়গায় আমি হলে 'রাজ্য' নয়, ডাকনাম রাখতাম 'পরমানন্দ'। ভালো নাম 'শাহীম মুহাম্মদ' নয়, রাখতাম 'পরমানন্দ প্রাণ'।'
আজ শুনি পরীমণি তাঁর নিজের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে ছেলের নাম রেখেছেন বা রাখতে চাইছেন, পদ্ম অথবা পূণ্য। দুটো নামই সুন্দর। ফুলের নামে শুধু মেয়ের নয়, ছেলের নামও হওয়া উচিত।'
গত বছর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এনে পরীমনি জানিয়েছিলেন মাস কয়েক আগেই শরীফুল রাজকে চুপিসাড়ে বিয়ে করেছেন তিনি। কিন্তু মাস কয়েক যেতে না যেতেই রাজের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ জানান পরীমনি। স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়া থেকে শুরু করে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ করেন পরীমনি। এখন দু-জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। রাজ্যর ১০ মাসের জন্মদিনে একফ্রেমে বন্দি হয়েছিলেন তাঁরা। তারপর আর যোগাযোগটুকু নেই।
পরীমনির দৃঢ়চেতা মনোভাবের প্রশংসা করেন তসলিমা। স্বামীকে ছাড়াও যে সন্তানের লালন-পালনে স্বনির্ভর পরীমনি সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন নায়িকা। কিন্তু একইসঙ্গে খানিক উদ্বিগ্ন তিনি। তসলিমার কথায়, 'সন্তান জীবনের সব নয়। সন্তানকে ঘিরে জীবন আবর্তিত হওয়া উচিত নয়। যদিও পিতৃতান্ত্রিক সমাজ চায়, মেয়েদের জীবনের কোনও মূল্য না থাকুক, সন্তান পালনই তাঁদের একমাত্র বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম হোক। পরীমণি যতই সন্তান নিয়ে মেতে থাকেন, পুরুষেরা ততই তাঁকে বাহবা দেয়। 'ভাল মা' উপাধি দেয়। সন্তানের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে হয় না, সন্তানকে ভাল গাইড করলেই সন্তান ভাল মানুষ হয়। পরীমণিকে আমি বাহবা দেব তিনি যদি নিজের অভিনয়ের কাজটিতে আরও মনোযোগী হন , অভিনয়ের চর্চা আরও করেন, অভিনয়ে আরও পারদর্শী হন, আরও বড় শিল্পী হয়ে ওঠেন। মনে রাখতে হবে মাতৃত্বেই মেয়েদের জীবনের সার্থকতা নয়। শিল্পীর কাজ অন্যত্র। 'ভাল মা' এর চেয়ে তাঁর বড় পরিচয় হোক 'ভাল শিল্পী'। 'ভালো মা' যে কোনও মেয়েই হতে পারে, 'ভালো শিল্পী' যে কোনও মেয়েই হতে পারে না।'
‘ভালো মা’ যে-কোনো মেয়ে হতে পারে, ‘মেয়েবেলা’ লেখিকার এই মন্তব্য হজম হয়নি নেটপাড়ার। এক মহিলা নেটিজেন তসলিমাকে খোঁচা দিয়ে লেখেন- ‘ভালো মা হতে গেলে একজন ভালো মানুষ হতে হয়, সেটা সবাই পারে না’। জবাবে তসলিমা লেখেন- 'সব মা'ই সন্তানকে ভালো লালন পালন করে, সব মা'ই নিজে কম খেয়েও সন্তানদের খাওয়ায়, সন্তানকে স্নান করায়, ঘুম পাড়ায়, কাপড় চোপড় পরায়, অ-আ-ক-খ শেখায়। সন্তান যারা খারাপ হয়, তারা খারাপ হয় বড় হয়ে, খারাপ সমাজ থেকে খারাপ শিক্ষা নিয়ে।' যদিও তাঁর এই জবাবে মন গলছে না নেটিজেনদের একটা বড় অংশের। আবার অনেকে লেখিকার ভাবনাকে সমর্থন জানিয়েছেন।