আজ সেই অভিশপ্ত ২০শে নভেম্বর। গত বছর আজকের দিনেই গোটা বাংলাকে কাঁদিয়ে চিরতরে বিদায় নিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা সেন। দেখতে দেখতে এ বছর অতিক্রান্ত। একজন মানুষকে যতরকমভাবে আগলে রাখা যায়, চেষ্টা করেছিলেন সব্যসাচী। ঐন্দ্রিলার প্রেমিক, তাঁর সবচেয়ে বড় সাপোর্ট সিস্টেম। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐন্দ্রিলার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বটে, তবে শেষরক্ষা হয়নি। কিন্তু প্রেম হারেনি সব্যসাচীর।
ঠিক এক বছর আগে নেটপাড়ার চোখে ‘আদর্শ প্রেমিক’ তকমা পেয়েছিলেন সব্যসাচী। প্রেমিকার শেষযাত্রায় তাঁর পা জড়িয়ে প্রগাঢ় চুম্বন থেকে চোখের জল আটাতে পারেননি কেউ। টানা ২০ দিন ধরে আইসিইউ-তে লড়াই চালিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। ২৪ বছরের ফুটফুটে মেয়েটা ফিরে আসার চেষ্টা করেছিল তাঁর প্রাণের সখার কাছে, কিন্তু পারেনি। ঐন্দ্রিলার নামের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে সব্যসাচীর নাম। প্রেমিকার মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যম থেকে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছেন সব্যসাচী। তবে কাজে ফিরেছেন মাস কয়েকের মধ্যেই।
এই মুহূর্তে স্টার জলসার রামপ্রসাদ ধারাবাহিকে দর্শক নাম ভূমিকায় দেখছে তাঁকে। রোজ সেটে যান, কাজ করেন নিজের সেরাটা উজার করে দিয়ে। কিন্তু সব্যসাচীর মন কেমন আছে? তাঁর খোজ মেলে না! ঐন্দ্রিলার মৃত্যুবার্ষিকীতে এক সংবাদমাধ্যমকে সব্যসাচী জানান, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেন আজকাল, সামাজিক মাধ্যমে ফিরি না কেন? আমার কি কিছুই বলার নেই? আমি প্রয়োজন বোধ করি না। এরকমটাই ছিলাম আজীবন। নিজে কোনওদিনও পিআর রেখে ফেসবুক-ইনস্টা করিনি। ও (ঐন্দ্রিলা শর্মা) জোর করত। লেখালিখি শুরু করেছিলাম। আর তো এ সবের প্রয়োজন দেখি না।’
বরাবরই অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ সব্যসাচী। ঐন্দ্রিলাকে ছাড়া প্রতিটা দিনযাপন সহজ নয় সব্যসাচীর কাছে। তবে সত্যিটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপার আছে কী? টিভি নাইন বাংলাকে তিনি বলেন, ‘শুধু জানি, সত্যিটা কে মেনে নিতে হয় এক পর্যায়ে গিয়ে। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে মানিয়ে নেন। চেষ্টা করেন। আমিও করছি। আমি ইন্ট্রোভার্ট বরাবরই। তাই অনেকেই হয়তো আমার থাকা, আমার যাপন নিয়ে নিজেদের মতো ভেবে নেন। সেটার উপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই। যা ঘটেছে, যা হয়েছে… একটা পর্যায়ের পর সেটাকে সত্যি বলে মেনে নেওয়া ছাড়া আমার কী করণীয় আর?’
অভিনয়ের বাইরে সোশ্যালাইজ করার তাগিদ কোনওদিন অনুভব করেননি ইন্ট্রোভার্ট সব্যসাচী। যেটুকু ঘটত সবটাই তাঁর মিষ্টি (ঐন্দ্রিলার ডাক নাম)-র প্রচেষ্টা। সিরিয়ালের সেটেই ঐন্দ্রিলার সঙ্গে তাঁর আলাপ। সেই আলাপ থেকে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম। বিয়ের স্বপ্নও সাজিয়েছিলেন তাঁরা। চলতি বছর মার্চ মাসেই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক ছিল, কিন্তু সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবে রূপ পেল না। এখন নিঃসঙ্গতা আর নিজের অধ্যাবসায় নিয়েই কাটছে সব্যসাচীর দিন।
একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথমবার ক্যানসার আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। বছর দেড়েকের চিকিৎসার পর সুস্থ হন তিনি। বছর খানেক পরেই অভিনয় জীবন শুরু করেন। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় ফের বিপদ অজান্তেই হানা দেয়। ঐন্দ্রিলার ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে, পরে জানা যায় সেটি ক্যানসারাস। ফের শুরু দীর্ঘ লড়াই। দ্বিতীয় দফাতেও ক্যানসারকে হারান ঐন্দ্রিলা। ২০২২ সালে খানিক সুস্থ হয়ে একটি ওয়েব সিরিজে কাজও করেন। সেই বছর ৩১শে অক্টোবর সব্যসাচীর জন্মদিন পালন করে গোয়ায় শ্য়ুটিং করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ১ তারিখ হঠাৎ করেই অসুস্থবোধ করেন অভিনেত্রী। হঠাৎ করে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় হাসপাতালে ভর্তি হন ঐন্দ্রিলা। আর ঘরে ফেরা হয়নি।