আরিয়ান খানের জামিনের আর্জির শুনানির ঠিক আগে বম্বে হাই কোর্টে হলফনামা জমা দিল কেন্দ্রীয় মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেই হলফনামায় এনসিবির তরফে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানির বিরুদ্ধে। আরিয়ান মামলার সবর্ত্র ছুটে বেরাতে দেখা গিয়েছে পূজাকে। এনসিবির দফতর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বা সেশন কোর্ট, আরিয়ানের জন্য ছুটেছেন তিনি। সেই পূজা দাদলানি প্রভাব খাটানোর চেষ্ট করেছে মামলার সাক্ষীদের উপর, দাবি এনসিবির। ক্রুজ ড্রাগ মামলার পঞ্চনামায় উল্লেখিত সাক্ষী প্রভাকর সেইলকে প্রভাবিত করেছে পূজা অভিযোগ এনসিবির।
এনসিবির দাবি, জারি থাকা তদন্তকে দিকভ্রষ্ট করবার চেষ্টা চলেছে, তদন্তের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ২৩ অক্টোবর প্রভাকর সেইলের হলফনামাই এই ঘটনার প্রমাণ। অন্য কোনও কোর্টের সামনে ওই ধরণের হলফনামা এর আগে জমা দেওয়া হয়নি। কিন্তু এনডিপিএস কোর্ট ও বম্বে হাই কোর্টে বিচারাধীন মামলাকে প্রভাবিত করতেই আচমকা ওই হলফনামার উদয়। শুধু তাই নয়, মিডিয়াতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওই হলফনামা। সেই হলফনাাতেও নাম রয়েছে পূজা দাদলানির, যে এই মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত আরিয়ান খানের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এদিন ভিভি সিং-এর তরফে দায়ের করা হলফনামায় বলা হয়েছে, ‘যেমনটা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ্য মহিলা (পূজা দাদলানি) পঞ্চনামায় উল্লেখিত সাক্ষীকে প্রভাবিত করেছে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে, তদন্তের এই পর্যায়ে এই ধরণের হস্তক্ষেপ সত্য অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি থমকে দিতে পারে’।
যেভাবে তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, তথ্য-প্রমাণ লোপাটের প্রয়াস চলছে এবং সাক্ষীদের উপর প্রভাব তৈরি করা হচ্ছে, শুধুমাত্র সেই দিক বিচার করেই আরিয়ান খানের জামিনের আবেদন খারিজ হতে পারে।
গত রবিবার থেকে চর্চায় আরিয়ান মাদক মামলার সাক্ষী প্রভাকর সেইল। আদালতে এক হলফনামা দিয়ে ওই দিন সেইল দাবি করে, ১০ পাতার সাদা কাগজে জোর করে তাঁকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়েছে এনসিবি। এখানেই শেষ নয় টাকার লেনদেনের কথাও যে শুনেছে বলে এক হলফনামায় দাবি করেছে সে। এই মামলার অপর সাক্ষী কেপি গোসাভি-র দেহরক্ষী হিসাবে আরিয়ানের গ্রেফতারির সময় কাজ করছিল প্রভাকর সেইল।
প্রভাকর সেইলের দাবি, ২রা অক্টোবরের রাতে আরিয়ানকে এনসিবির দফতরে নিয়ে আসবার পর কেপি গোসাভি এবং স্যাম ডিসুজার মধ্যেকার কথোপকথন শুনেছিল সে, সেখানে ২৫ কোটি টাকা দাবি করবার কথা বলা হয়েছিল। এবং ১৮ কোটিতে গোটা মামলা রফা করবার কথা পাকা হয়েছিল, যার মধ্যে ৮ কোটি টাকা এনসিবির জোনাল ডিরেক্টর সমীর ওয়াংখেড়েকে দেওয়ার কথা হয়েছিল। পরবর্তীতে শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানির সঙ্গে কেপি গোসাভিকে গাড়ির ভিতর কথা বলতে দেখেছিল সে। এরপর গোসাভি একটা নির্দিষ্ট লোকেশন থেকে ৫০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে বলে। দুটো টাকা ভর্তি ব্যাগ সে গোসাভির কাছে পৌঁছে দেয়।
এনসিবির অফিসারা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে, এমন আশঙ্ক্ষাও প্রকাশ করতে দেখা গেছে প্রভাকর সেইলকে। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের পর থেকেই প্রভাকর সেইলকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে মুম্বই পুলিশের তরফে।
যদিও নিজের আইনজীবী মুকুল রোহাতগি মারফত এদিন হাই কোর্টকে আরিয়ান খান পালটা জানিয়েছেন, প্রভাকর সেইল এবং কিরণ গোসাভির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। এবং NCB জোনাল ডিরেক্টরের বিরূদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়েও তার কোনও বক্তব্য নেই।