গত ৯ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান উস্তাদ রাশিদ খান। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে সঙ্গীত জগতে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। একাধিক তারকা শোকপ্রকাশ করেছেন। বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এবার এদিন শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উদ্দেশ্যে লিখলেন একটি বিশেষ পোস্ট। স্মৃতি হাতড়ে সেখানে লিখলেন অনেক অজানা কথা।
উস্তাদ রাশিদ খানের মৃত্যুর পর কী লিখলেন শ্রীজাত?
শ্রীজাতর মা ভীষণই স্নেহ করতেন রাশিদ খানকে। মাঝে মধ্যেই তাঁর খোঁজ নিতেন। এখন অসুস্থতার জন্য খবরের কাগজ না পড়লে বা রেডিয়ো না শুনলেও তিনি কবি বা তাঁর স্ত্রীর থেকে খবরাখবর নিতেন। এখনও তাঁকে এই শোকের খবর জানানো হয়নি বলেই জানালেন শ্রীজাত।
আরও পড়ুন: প্রেমের মাসে মোটেই আংটি বদল হচ্ছে না! এখনই বাগদান নয় রশ্মিকা-বিজয়ের, দাবি রিপোর্টে
আরও পড়ুন: আওগে জব তুম গাইতেই চাননি রাশিদ খান! কাঠখড় পুড়িয়ে কীভাবে রাজি করান ইমতিয়াজ?
কবি এদিন তাঁর পোস্টে লেখেন, 'এই কয়েক বছরে আমার আর দূর্বার সঙ্গে রাশিদদার অজস্র স্মৃতি তৈরি হয়েছে এক এক করে, সেসব আস্তে আস্তে লিখব। মঞ্চের এক অদ্বিতীয় শিল্পী থেকে একজন দিলখোলা ঘরোয়া মানুষকে কীভাবে খুঁজে পেয়েছি, সে-কাহিনি এক লেখায় শেষ হবার নয়। তাই রাশিদদাকে নিয়ে আরও লিখব, বহুবার লিখব। এমনটাই ইচ্ছে। তবু যে এই লেখাকেই প্রথমে নিয়ে এলাম, তার কারণ ওই একটাই। মিথ্যেটা আগে স্বীকার করে নেওয়া ভাল।'
আরও পড়ুন: 'যখন ভাববে সব ঠিক, তখনই...' আরিয়ান কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন শাহরুখ, জানালেন কী শিক্ষা পেয়েছেন
তিনি এদিন আরও লেখেন, 'বছর দুয়েক আগের শেষ-বসন্তের এক সন্ধেবেলা রাশিদদা মায়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গীত আকাদেমি প্রচলিত এই সম্মাননা, শ্রীনন্দিনী পুরস্কার। মঞ্চে অনেকক্ষণ দুজনে পরস্পরের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন, বহুদিনের জমা হয়ে থাকা খোশগল্প সেরে নিচ্ছিলেন। তেমনই এক মুহূর্তের ছবি এটি। মায়ের সঙ্গে যে রাশিদদার অহরহ মোলাকাত হতো, তেমন নয়। কিন্তু গানের মানুষদের মধ্যে, একই শিল্পে নিবেদিত শিল্পীদের মধ্যে এক ধরনের অলিখিত যোগাযোগ থাকে। বাতাসে বা তরঙ্গে সে যোগাযোগ ঠিক বাহিত হয়, আমরা টের না পেলেও।' শ্রীজাত তাঁর পোস্টে লেখেন, 'আমাদের যখন কৈশোর, তখন থেকে কলকাতার আসরে গাইছেন তরুণ রাশিদ। মায়েদের প্রজন্মের যাঁরা গানবাজনা করেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন, অসামান্য এক উত্তরসূরী এসে গেছে মেহফিলে। সুরের মধ্য দিয়ে তখনই এক যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায়। গেছিলও। তারপর বহু বছর কেটে গেছে, মা অনেকদিনই মঞ্চ থেকে সরে এসেছেন, বাড়িতে শেখানোও বন্ধ করেছেন বেশ কিছু বছর। কিন্তু গানবাজনার খোঁজখবর নেওয়াটা ছাড়েননি। বিশেষ করে, রাশিদদার গানবাজনার খবর। আমরা কোনও আসরে যাচ্ছি শুনলেই এ কথা জিগ্যেস করাটা স্বভাব হয়ে গেছে, রাশিদ গাইছে নাকি আজ? আর যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে যত রাতেই বাড়ি ফিরি না কেন, মার প্রশ্ন থাকে, কী গাইল আজ রাশিদ? আজ মায়ের ঘরে কাগজ ঢোকেনি, রেডিয়ো বা টেলিভিশন চলেনি। আজ, যখন সারা পৃথিবী জেনে গেছে উস্তাদ রাশিদ খান আর নেই, আমার মা দিব্যি জানে, রাশিদ আছে। গাইছে। আড্ডা দিচ্ছে। বহাল তবিয়তে আছে। থাকুক। ওভাবেই থাকুক। এই বিশাল গ্রহের এক কোণে একটা ছোট্ট ঘরে, এই বিপুল জনসংখ্যার মাত্র একজনের মনে সবদিক থেকে বেঁচে থাকুক রাশিদদা।'
পরিশেষে তিনি তাঁর পোস্টের শেষে লেখেন, 'যতদিন মা আছেন, বাড়ি ফিরে শোনাতেও হবে, কী কী শুনলাম। তারপর আসবে সেই অবধারিত প্রশ্ন, আজ রাশিদ গায়নি? কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাকে বলতে হবে, হ্যাঁ মা, রাশিদদা গাইল তো, একেবারে শেষে। শুনে স্বস্তির হাসি ফুটিয়ে মা আবার জিগ্যেস করবেন, কী গাইল আজ রাশিদ? আমি আরেকটু সময় নিয়ে বলব, এই তো, প্রথমে বাগেশ্রী, তারপর সাহানা, শেষে মিশ্র পাহাড়ি। এই খবরটুকুই মায়ের ঘুমপাড়ানি গান হয়ে থাকবে, বাকি জীবন। আর মা যতদিন থাকবেন, আমাদের বাড়িতে একখানা সুরেলা মিথ্যে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াবে। যার ডাকনাম রাশিদ।'
কে কী বলছেন?
অনেকেই এই পোস্টে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। এক ব্যক্তি লেখেন, 'আহা, এমন লেখা পড়তে পড়তে চোখে জল আসে, সে জল গড়িয়ে নামে না, কাঁপে।' দ্বিতীয়জনের মতে, 'কিছু মিথ্যে পৃথিবীতে সত্যের মতো সুন্দর; যা প্রাণের স্পন্দন। শ্রদ্ধা জানাই।' তৃতীয়জন লেখেন, 'আমার জীবনটাও এমন ঘটনায় আচ্ছন্ন। মা কাল থেকে কেঁদে চলেছেন।'