‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’র স্রষ্টা ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় (Sasthipada Chattopadhyay)-এর জীবনাবসান। শুক্রবার বেলা ১১.২০ মিনিটে চলে গেলেন বাঙালির প্রিয় শিশুসাহিত্যিক। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়, সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যে একটা যুগের অবসান হল।
পরিবার সূত্রে খবর, গত রবিবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অশীতিপর সাহিত্যিক। বৃহস্পতিবার রাত থেকে পরিস্থিতি আচমকা বিগড়ে যায়, চিকিৎকরা সবরকম চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। এদিন দুপুর তিনটের পর হাসপাতাল থেকে ষষ্ঠীপদবাবুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে হাওড়ার জগাছায়, নিজ বাসভবনে। হাওড়ার শিবপুর বার্নিং ঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
এর আগে জানুয়ারি মাসেও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছিলেন, কিন্তু ফের ফেব্রুয়ারির শেষে তিন নম্বর বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আগের দুই ধাক্কা সামলে নিলেও এবার আর পারলেন না! তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া সাহিত্য় জগতে।
বাঙালির কাছে আবেগের আরেক নাম ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’। তাঁর লেখনিতেই বাবলু, বাচ্চু , বিলু, ভোম্বল, বিচ্চু এবং পঞ্চু —এই পঞ্চ পাণ্ডব জটিল রহস্যের সমাধান করেছে বইয়ের পাতায়। মলাটবন্দি বইয়ের পাতায় জীবন্ত হয়েছে প্রতিটা চরিত্র। রহস্য আর রোমাঞ্চপ্রেমী বাঙালিকে কিশোরদের রহস্য উন্মোচনের এই নেশা শুরু থেকে পাণ্ডব গোয়েন্দার প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে।
হাওড়ার খুরুটতে ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। ছোট থেকেই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ছিলেন তিনি, লেখালেখির শখও ছিল বিস্তর। ১৯৬১ সালে প্রথম সারির এক সংবাদ পত্রের সঙ্গে যুক্ত হন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। দু-দশক পর তাঁর সৃষ্ট পাণ্ডব গোয়েন্দা বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়কে। তবে ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’র পাশাপাশি ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ অম্বর চ্যাটার্জী’, ‘কিশোর গোয়েন্দা তাতার-এর অভিযান’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গোয়েন্দা গল্প রচনা করেছেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়।
তাঁর রচনা নিয়ে ছোটপর্দা কিংবা রুপোলি পর্দাতেও কাজ হয়েছে। জি বাংলায় তৈরি হয়েছে ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’, ‘গোয়েন্দা তাতার’কে বছর তিনেক আগে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন পরিচালক শ্রীকান্ত গোলুই।
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় প্রকাশিত জনপ্রিয় গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে 'চতুর্থ তদন্ত', 'সোনার গণপতি হীরের চোখ', 'কাকাহিগড় অভিযান', 'সেরা রহস্য পঁচিশ', 'সেরা গোয়েন্দা পঁচিশ', 'রহস্য রজনীগন্ধার', 'দেবদাসী তীর্থ', 'কিংবদন্তীর বিক্রমাদিত্য', 'পুণ্যতীর্থে ভ্রমণ', 'কেদারনাথ', 'হিমালয়ের নয় দেবী'।
শিশুসাহিত্যে তাঁর অবদানের ২০১৭ সালে বাংলা নাটক আকাদেমির তরফে সম্মানিত হন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুতে বাঙালির ছোটবেলাটা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেল।