ফের অমানবিক ছবি উঠে এল শহর কলকাতার বুকে! এবার মানুষের ফূর্তির রসদ জোগাতে গিয়ে অত্যাচারিত এক ছোট্ট বাঁদর ছানা। হোচিমিন সরনিতে অবস্থিত এক নাইট ক্লবে থিম পার্টির নামে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হল একটি বাঁদর ছানাকে, সেই ছবি ও ভিডিয়ো (যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় সর্বত্র। এক কথায় ছিছিকার পড়ে গিয়েছে শহর জুড়ে। আম জনতার পাশাপাশি বাদ নেই টলি তারকারাও।
তৃণা সাহা, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় থেকে অনামিকা চক্রবর্তী, অসহায় বাঁদর ছানার করুণ পরিস্থিতি দেখে চোখে জল সবার। টয় রুম কলকাতা নামক ওই নাইটক্লাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নেটিজেনরা। সাকার্স থিমের পার্টি আয়োজন করা হয়েছিল ওই ক্লাবে। আর সেখানেই বিরাট বড় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় বাঁদর ছানাকে। কখনও গানের তালে সে নাচছে, আবার কখনও ক্লান্ত মুখে ঝিমিয়ে পড়েছে। পানাশালার মোচ্ছবী মানুষজন সেই ঝিমিয়ে পড়া বাঁদর ছানার সঙ্গেই কখনও সেলফি তুলছেন আবার কখনও আদরের নামে তাকে টানাহেঁচড়া করতে ব্যস্ত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি তুলে ধরে ‘গাঁটছড়া’ খ্যাত অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘যদি আপনারা মনে করে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা একটা ছোট্ট বাঁদরকে ব্যবহার করে আপনাদের সার্কাস থিমড পার্টি খুব কুল (Cool) লাগছে, তাহলে আর কিছু বলবার নেই…’।
এখানে আকাশ নীল খ্যাত অনামিকা চক্রবর্তী লেখেন- ‘নিজেদের আমোদের জন্য একটা অবলা প্রাণীর উপর অত্যাচার করাকে আপনারা কি খুব কুল কোনও ব্যাপার মনে করেন? একটা অভিজাত নাইটক্লাবে এহেন কুকীর্তি কীভাবে ঘটল? যে বা যারা এই ক্ষুধার্ত বাঁদরছানাটিকে নিয়ে এরকম মশকরা করেছেন, আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। ছিঃ’।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ জানান অভিনেত্রী তৃণা সাহাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে এই ঘটনার সুবিচার দাবি করেছেন অভিনেত্রী। তিনি লেখেন, ‘আমরা কি এই ধরণের অবিচারের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব না?’ এরপরই কলকাতা পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করেন অভিনেত্রী। শুধু তারকারাই নন, টলিউডের স্টারকিডরাও এই ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর। স্বস্তিকা -কন্যা অন্বেষা, শ্রাবন্তী পুত্র অভিমন্যু কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন টয়রুম কলকাতার। এই নাটকক্লাব বয়কটের দাবিতে সরব নেটিজেনরা।
যদিও এই বিকৃত বিনোদনের আঁতুরঘর যেটি, সেই টয় রুম কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনায় নীরব। সংবাদমাধ্যমের সামনে শুক্রবার রাতের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে না-রাজ তারা। বাঁদর ছাড়া সার্কাস থিমড এই পার্টিতে অন্য কোনও প্রাণী ছিল তা স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, বন দফতরের টিম শনিবার সেই নাটই ক্লাবে হাজির হয়েছিল এবং নোটিশও ধরানো হয়েছে। পৌঁছেছিল কলকাতা পুলিশের টিমও। গতকালের পার্টির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তদন্ত শুরু করলেও এই ঘটনায় এখনও কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জি চব্বিশ ঘন্টাকে জানান, ‘এটা করা যায় না। এটা আইন বিরুদ্ধ। যদি এমনটা ঘটে থাকে, তাহলে বন্যপ্রাণ আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।