চাপ মুক্ত করা হোক বা শরীরের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি, আবার মানসিক স্পষ্টতা ও শান্তির পরিবেশ গড়ে তোলাই হোক না-কেন, যোগাসনের মাধ্যমে এ সমস্ত কিছুই সুনিশ্চিত করা যায়। ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের নানান ভঙ্গির সৌজন্যে যোগাসন স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশেষ ভাবে উপকারী। এর ফলে আমাদের মনোযোগ তীক্ষ্ণ হয়, মন ভালো থাকে এবং শরীর স্বস্তি পায়, যা আমাদের ভালো ও পর্যাপ্ত ঘুমে সাহায্য করে। শক্তি বৃদ্ধি, ভারসাম্য রক্ষা ও নমনীয়তা বজায় রেখে আর্থ্রাইটিস ও হৃদয়ের সুস্থতা সুনিশ্চিত হয় যোগাসনের মাধ্যমে। যোগব্যায়ম করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রোগ মুক্তি সম্ভব হয়।
প্রতি রাতে ঘুমানোর জন্য দ্বন্দ্ব চালিয়ে থাকলে ঘুমানোর আগে এই ৫টি যোগাসন করে দেখতে পারেন। এর ফলে চাপ মুক্ত হবেন, মন ও শরীরের ব্যাগ্রতা ও উত্তেজনা কমবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য ভারসাম্য প্রতিস্থাপিত হবে। এই ৫টি যোগাসন ভালো ঘুমের জন্য সাহায্য করবে—
১. বৃক্ষাসন
পদ্ধতি
একটি পায়ে ভারসাম্য রেখে দাঁড়ান। অপর পা-টি মুড়ে জঙ্ঘায় সার্পোট দিয়ে রাখুন। মাথার ওপরে হাত তুলুন এবং সোজা ওপরের দিকে পয়েন্ট করে রাখুন। এর পর অঞ্জলি মুদ্রায় হাত রাখুন। স্থির দৃষ্টি রেখে বাঁ পায়ে ওজন স্থানান্তরিত করুন এবং ডান হাঁটুটিকে অর্ধেক মুড়ে অর্ধপদ্ম ভঙ্গিতে রাখুন। কিছুক্ষণ এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তার পর একই ভাবে ডান পায়ে দাঁড়িয়ে এবং বাঁ পা মুড়ে এই আসনটি করুন।
উপকারিতা
এই আসনের সাহায্যে মন ও মস্তিষ্কে ভারসাম্য পুনঃস্থাপিত হয়। এর ফলে পা শক্তিশালী হয়। শুধু তাই নয় এই আসন পেলভিক স্থায়িত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং পা ও নিতম্বের হাড় মজবুত করে।
প্রতিটি পায়ে শরীরের পূর্ণ ভারসাম্য স্থানান্তরিত করার ফলে পায়ের লিগামেন্ট ও টেন্ডন মজবুত হয়। পাশাপাশি জঙ্ঘা, পায়ের কাফ পেশী এবং গোড়ালিও মজবুত করে এই আসন। এর ফলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
২. উষ্ট্রাসন
পদ্ধতি- ম্যাটের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে পড়ুন। হাঁটু ও পা সমান ভাবে রাখুন। এবার নিতম্ব আগের দিকে আনতে আনতে পিঠ পিছনের দিকে ঝোকান। মাথা ও স্পাইন পিছনের দিকে যতটা সম্ভব ঝুকিয়ে রাখুন। দুই পায়ের পাতার ওপর দুই হাত রাখতে হবে। শরীর ও পিঠের পেশীগুলিকে স্বস্তি দিন। এ ভাবে কয়েক সেকেন্ড থাকতে হবে। তার পর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।
উপকারিতা- কাঁধ ও পিঠ স্ট্রেচ ও মজবুত করা থেকে শুরু করে নিতম্ব মজবুত করা এবং নিতম্বের ফ্লেক্সরস স্ট্রেচ করে এই আসন। শুধু তাই নয় শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় উন্নতি ঘটায় এবং হজম শক্তি উন্নত করে। এটি ভার্টিব্রাকে শিথিল করে, নীচের দিকের পিঠের ব্যথা থেকে স্বস্তি দেয়। পাশাপাশি অঙ্গভঙ্গি উন্নত করে এবং জঙ্ঘার মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
৩. ভুজঙ্গাসন
পদ্ধতি- নিজের পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের পাতা রাখতে হবে বুকের পাশে, বাহু থাকবে শরীরের কাছে এবং কনুই বাইরের দিকে পয়েন্ট করবে। শ্বাস নিন এবং মাথা, গলা ও কাঁধ ওপরে তুলুন।
হাতের ওপর ভর দিয়ে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ওপরের দিকে তুলতে থাকুন। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালাতে চালাতে ওপরের দিকে দেখুন। পেট যাতে ওপরে না-ওঠে, অর্থাৎ মেঝে ছুয়ে থাকে। ৫ সেকেন্ড এ ভাবে থাকতে হবে। ধীরে ধীরে পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন। এক দিকে মাথা ঘুরিয়ে দুহাত শরীরের পাশে রেখে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা- এই আসনের ফলে স্পাইন, নিতম্ব, নিতম্বের পেশী বুক, পেট, কাঁধ, ফুসফুস মজবুত হয়। এর ফলে রক্ত সংবহন উন্নত হয় এবং ব্যক্তি চাপমুক্ত হতে পারে।
৪. বালাসন
পদ্ধতি- নিজের গোড়ালির ওপর ভর দিয়ে বসতে হবে। হাঁটু একসঙ্গে জুড়ে থাকবে অথবা একটু দূরত্বের মধ্যে রাখতে পারেন। শ্বাস ছেড়ে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুকে পড়ুন। কপাল দিয়ে মেঝে স্পর্শ করবেন। হাত থাকবে শরীরের পাশে এবং হাতের পাতা ওপরের দিকে মুখ করে থাকবে।
আবার হাত দুটিকে সামনের দিকে লম্বা করে রেখে ম্যাটের সঙ্গে লাগিয়েও হাতের তালু রাখা যেতে পারে। হাঁটু দুটি জোড়া থাকলে জঙ্ঘার ওপর ধীরে ধীরে বুক দিয়ে চাপ দিন। আবার হাঁটু দূরত্বের মধ্যে থাকলে জঙ্ঘার মাঝে বুক দিয়ে চাপ দিন। কাঁধ, চোয়াল ও চোখকে রিল্যাক্স করুন। কপাল যাতে স্বস্তিতে ও ঠিক ভাবে থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। ভুরুযুগলের মাঝে শক্তির উৎসস্থল রয়েছে। ভেগাস স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে এটি বিশ্রাম ও হজমে সাহায্য করে। যতক্ষণ সম্ভব এ ভাবে থাকুন। শ্বাস গ্রহণ করতে করতে নাভি স্পাইনের দিকে তুলুন এবং শ্বাস ছাড়ার সময় শরীর ও বাহু নরম রাখুন। এর পর আগের অবস্থায় ফিরে আসুন এবং গোড়ালির ওপর বসে পড়ুন।
উপকারিতা- যাঁরা সদ্য যোগাসন শুরু করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই যোগব্যায়মটি চাপ ও উত্তেজনা কম করতে সাহায্য করে। এ সময় বুক, পিঠ ও কাঁধ চাপমুক্ত হয়। আবার দিনের বেলায় বা ওয়ার্ক আউটের সময় ক্নান্তি থাকলে, তা থেকেও মুক্তি দেয়। পিঠের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে এই যোগাসন। কারণ এর ফলে পিঠ, নিতম্ব, জঙ্ঘা ও গোড়ালি সামান্য প্রসারিত হয়।
৫. পরিবৃত্ত পার্শ্বকোণাসন
পদ্ধতি- মুখ নীচের দিকে রেখে চারপায়ী জন্তুর মত করে উপুর হয়ে থাকুন। দুই হাতের মাঝখানে ডান পা নিয়ে আসুন। বাঁ পা সোজা রাখুন এবং পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে রাখতে হবে। এ সময় বাঁ পায়ের গোড়ালি ওপরের দিকে থাকবে। শ্বাস ছেড়ে পেলভিককে নীচের দিকে রাখুন এবং ভূমির সঙ্গে সমান্তরালে রাখতে হবে ডান জঙ্ঘাকে।
শ্বাস গ্রহণ করে ডান হাত ওপরে তুলুন। কাঁধ যেন সমান্তরালে থাকে, সে বিষয় লক্ষ্য রাখবেন। ১০-১৫ সেকেন্ড এ ভাবে থাকতে হবে।
উপকারিতা- এই আসন স্পাইনকে পুনরুজ্জীবিত করে, হ্যামস্ট্রিঙ্গসকে প্রসারিত ও নমনীয় করে। এর পাশাপাশি জঙ্ঘা, কাভস, গোড়ালিকে টোন করে এবং পিঠের পেশীকে শক্তিশালী করে। এই আসনের ফলে মনোযোগ ও ভারসাম্য বৃদ্ধি পায় এবং টক্সিক নির্গত করে।
সতর্কতা
অ্যাস্থমা, ডাইরিয়া, ভার্টিগো, মাইগ্রেন, ইনসমনিয়া, ঘাড় ও পিঠের আঘাত, নিম্ন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এই আসন করার আগে নিজের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।