রণবীর ভট্টাচার্য
সাহাবজাদে ইরফান আলি খান। দু’টি বসন্ত নিরুত্তাপে কেটে গেল ইরফানকে ছাড়াই। শান্তির ঘুমে শায়িত ইরফানকে সারা দিন সঙ্গ দিয়ে যায় রাত কি রানী গাছ। কোভিড পর্ব কাটল, রয়ে গেল তার সিনেমা আর অজস্র মন ভালো করা মুহূর্ত। আর থেকে গেল অনেক কিছু না বলা, চলে যাওয়ার আগের সেই দিনগুলির কথা…
কিন্তু আমরা কি একটুও ভুলতে পেরেছি অভিনেতা ইরফান খানকে?
ভারতীয় সিনেমা জগৎ খুব নির্মম। এখানে প্রতি শুক্রবার স্বপ্ন ভাঙ্গা গড়া হয়। আজ যে হিরো, কোনও দিন হয়তো তাকে কেউ চিনতেও পারবে না ব্যর্থতার আলখাল্লায়। এখানে পরিচয় দুটো শুধুমাত্র— পরিবার আর সাফল্য। এই একপেশে সিস্টেমের মধ্যে নতুন রঙে এঁকেছিলেন কোন অখ্যাত গ্রামের এক ছাপোষা পরিবার থেকে উঠে আসা অভিনেতা ইরফান খান। রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার কথা অনেকে বুঝতেই পারেননি, অনেকে আবার মৌল/মাও-বাদের চশমা পড়ে দেখার চেষ্টা করেছেন, অনেকে জাতীয়তাবাদী চুম্বক খুঁজেছেন। কিন্তু কয়েক প্রজন্মের অর্ধ শতাব্দী ফারাক থাকলেও, ইরফান কিন্তু রবি ঠাকুরের সেই আন্তর্জাতিক স্তরের মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তাই ইরফানের চলে যাওয়া নিজের স্বজন বিয়োগের কথা মনে হয়, এক অদ্ভুত হাহাকার যেন ঘিরে ধরে।
একবার একটি আলোচনায় ইরফান বলেছিলেন একটি সভ্য সমাজের চিহ্ন হল যখন প্রতিভা তার কদর পায়। ইরফানের স্রেফ প্রতিভা ছিল, কোন গডফাদার ছিল। তবে মজার ব্যাপার হল, জীবদ্দশায় যদি হিন্দিতে গডফাদার হতো, ইরফানকে কিন্তু নিতেই হতো!
সিনেমাকে অনেকেই শো বিজনেস বলেন, যেখানে পুরোটাই দেখনদারি, আধুনিক যুগের সাংস্কৃতিক সেলসম্যান। কিন্তু কতজন কাজটা পারেন? দেশ, কাল, ভাষার পারাপার সহজ নয়। ভারতের বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন সিনেমায় অনেকেই উঠে এসেছেন, মন জয় করেছেন, কিন্তু আটকে গিয়েছেন কোনও এক পরিচিত ধাঁধায়। এতে ভুল নেই, সীমাবদ্ধতা আছে। অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেন যে অভিনয় শেখা যায় না, বড়জোর একটু লেভেল আপ করা যায় বটে।
ইরফান কিন্তু একটা বেঞ্চমার্ক তৈরি করে গেছেন আন্তর্জাতিক সিনেমা তথা ভারতীয় সিনেমার জন্য। তাই সিনেমার সঙ্গে তিনিও অমর হয়ে গিয়েছেন।
আজ মনে পড়ে শেষের দিকে একটি সিনেমায় ইরফানের চরিত্রে খালি গলায় পরিচিতি কয়েকটি লাইন...
बड़े अच्छे लगते हैं,
बड़े अच्छे लगते हैं,
ये धरती, ये नदिया, ये रैना
और? और तुम…