শুক্লপক্ষের চতুর্থ তিথিতে বাংলায় শীত শেষ হয়ে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে শুরু হচ্ছে বসন্ত। তার মানে বাংলায় বসন্ত শুরু হচ্ছে মাঘ মাসেই, ফাল্গুনে নয়। এই শ্রীপঞ্চমী তিথিতেই বাংলায় অনুষ্ঠিত হয় সরস্বতী পুজো। এই সরস্বতী পুজোর দিন থেকেই বসন্ত ঋতুর শুরু বলে একসময় এদিন বাসন্তী রঙের কাপড় পড়ত মেয়েরা। এই ঐতিহ্য প্রমাণ করছে, সরস্বতী পুজোর দিন থেকেই বসন্ত শুরু। তাই বসন্ত পঞ্চমীর দিন জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর পুজো করা হয়। এই পুজোর সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে।
সরস্বতী পুজোর সঙ্গে যে ফলটা খুবই পরিচিত তা হল কুল। সরস্বতী পুজোর প্রসাদে এই ফল থাকবেই থাকবে। টক-মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট এই ফল বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলেরই খুব প্রিয়। কিন্তু ছোটো থেকে আমরা সবাই শুনে আসছি যে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই, তাহলে নাকি সরস্বতী ঠাকুর রেগে যান এবং পরীক্ষায় পাশ করা যায় না। বাড়ির বড়রা ছোটোদের প্রায়ই বলে থাকেন এই কথা। পুজোর অঞ্জলি দিয়ে তার পরেই প্রসাদে কুল খাওয়ার রীতি প্রচলিত বহুদিন ধরে। তবে এর পিছনের আসল কারণ জানেন কি?
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, সরস্বতী দেবীকে তুষ্ট করার জন্য মহামুনি ব্যাসদেব বদ্রিকাশ্রমে তপস্যা করেছিলেন। তপস্যা শুরুর আগে তাঁর তপস্যাস্থলের কাছে একটি কুল বীজ রেখে দেবী একটি শর্ত দেন। এই কুলবীজ অঙ্কুরিত হয়ে চারা, চারা থেকে বড় গাছ, বড় গাছে ফুল থেকে নতুন কুল হবে। দেবী বলেন, যে দিন সেই কুল পেকে ব্যাসদেবের মাথায় পতিত হবে, সেই দিন তার তপস্যা পূর্ণ হবে বা সরস্বতী দেবী তুষ্ট হবেন। ব্যাসদেবও সেই শর্ত মেনে নিয়ে তপস্যা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে বেশ কয়েক বছরে এই কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে চারা, চারা থেকে বড় গাছ, বড় গাছে ফুল থেকে নতুন কুল হয় এবং একদিন তা পেকে ব্যাসদেবের মাথায় পতিত হয়। তখন ব্যাসদেব বুঝতে পারেন যে, সরস্বতী দেবী তাঁর প্রতি তুষ্ট হয়েছেন। সে দিনটি ছিল পঞ্চমী। সে দিন বেদমাতা সরস্বতীকে বদ্রী/কুল ফল নিবেদন করে অর্চনা করে তিনি ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেন। শ্রীপঞ্চমীর দিন সরস্বতী দেবী তুষ্ট হয়েছিলেন। তাই সেই দিনের আগে আমরা কুল খাই না। শ্রীপঞ্চমীর দিন সরস্বতী দেবীকে কুল নিবেদন করার পরেই কুল খাওয়া হয়।
কিন্তু কোনও লোকাচার বা শাস্ত্রের নিয়ম তো ছোটোরা বোঝে না বা মানতে পারে না। তাই বাড়ির বড়রা তাদের এই বলে ভয় দেখান যে, সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে পরীক্ষায় পাশ করা যায় না।
তবে স্বাস্থ্যগত কারণেও সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া ঠিক নয়। সরস্বতী পুজোর সময় বা তার আগে শীতকাল চলে। এই সময়ে বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দেয় চারিদিকে। সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটের সমস্যা ঘরে ঘরে লেগে থাকে এই সময়ে। তাছাড়া, মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগে কুল কাঁচা বা কশযুক্ত থাকে। আধ পাকা বা কাঁচা কুল খেলে পেটের সমস্যা বা শরীরের অন্যান্য আরও ক্ষতি হতে পারে।