অ্যানেস্থেশিয়া প্রয়োগ না করেই একেবারে সজাগ অবস্থায় ৫ বছর বয়সি এক শিশুর মাথার খুলি ওপেন করে বের করা হল টিউমার। এরকমই অস্ত্রোপচারে সাফল্য পেল দিল্লির এইমস হাসপাতাল। চিকিৎসকদের দাবি, সবচেয়ে কম বয়সে এই ধরনের অস্ত্রোপচার বিশ্বের মধ্যে এই প্রথম হল এইমসে। তবে অস্ত্রোপচারের সময় শিশুটি যে সাহস দেখিয়েছে তাতে অবাক সকলেই। অস্ত্রোপচারের সময় ৪ ঘণ্টা ধরে হাসিমুখেই, আবার কখনও হাতের ইশারাতে খেলতে দেখা যায় শিশুকে। চিকিৎসকরা অনবরত শিশুর সঙ্গে কথা বলছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের চিকিৎসা ইতিহাসে এত কম বয়সি শিশুকে অচেতন না করে অস্ত্রোপচারের ঘটনা এটাই প্রথম।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে ৫০০ গ্রামের টিউমার, খুলি ‘ওপেন’ করে অপারেশন, তরুণীর প্রাণ বাঁচাল NRS
জানা যায়, ওই শিশু উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের বাসিন্দা। তার বয়স ৫ বছর ১০ মাস। মেয়েটি মাঝেমধ্যেই মাথাব্যথা, বমি সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগছিল। এছাড়াও তার খিঁচুনি হচ্ছিল। তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে এইমস হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানতে পারেন তার মাথায় টিউমার রয়েছে। প্রায় দুই বছর আগে এই টিউমার বের করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তবে অস্ত্রোপচারের পর টিউমারের কিছু অংশ মাথায় থেকে যায়। মেয়েটির অবস্থা দেখে এইমসের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. দীপক গুপ্ত, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের ডা. মিহির পান্ড্যসহ ৭ চিকিৎসকের একটি দল গঠন করা হয়। দলটি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয় যে মেয়েটিকে অ্যানেস্থেশিয়া প্রয়োগ ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা হবে।
মিহির পান্ড্য জানিয়েছেন, এই অস্ত্রোপচার খুবই জটিল ছিল। গত ৪ জানুয়ারি সাত চিকিৎসকের সঙ্গে অন্যান্যরা অস্ত্রোপচার করেন। দলের কয়েকজন সদস্য মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রথমে মেয়েটির মাথার খুলিতে ১৬টি ইনজেকশন দেওয়া হয়। তার মাথা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে গেলে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার শুরু করেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলা অস্ত্রোপচারের পর মেয়েটির মাথা থেকে টিউমার সম্পূর্ণভাবে বের করা সম্ভব হয়। পুরো অস্ত্রোপচারের সময় মেয়েটি হাসছিল। ফোনে তাকে কয়েকবার ভিডিয়ো ও ছবি দেখানো হয়। অস্ত্রোপচারের পর মেয়েটি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং শীঘ্রই তাকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা বলছেন, মেয়েটির পেরিসিলভিয়ান ইন্ট্রা এক্সিয়াল ব্রেন টিউমার ছিল। এমনটা যে কারোরই হতে পারে। ব্রেন টিউমার হলে মাথাব্যথা, বমি, হাঁটতে অসুবিধা, খিঁচুনির মতো উপসর্গ দেখা যায়। যদি কারও সঙ্গে এটি ঘটে তবে অবিলম্বে ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এক্ষেত্রেও মেয়েটির মধ্যে এই সব লক্ষণ দেখা গিয়েছে।