মহিলা সংরক্ষণ বিলের নাম পাল্টে সংসদে চমক দিয়েছেন মোদী সরকার। আর এই বিল নিয়ে এখন জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে তুঙ্গে চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ আজ, বুধবার রাহুল গান্ধী এই বিলটিকে অসম্পূর্ণ বলে অভিযোগ তুলেছেন। তবে নারীশক্তি বন্ধন অধিনিয়মকে (মহিলা সংরক্ষণ বিল) সমর্থন করলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। তবে এই বিল আনার নেপথ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘এই বিলকে আমার অসম্পূর্ণ বলে মনে হচ্ছে যখন দেখি কেন্দ্রীয় সরকারের ৯০ জন সেক্রটারির মধ্যে মাত্র ৩ জন ওবিসি সম্প্রদায়ভূক্ত।’
এদিকে এই বিলকে দ্রুত বাস্তবায়িত করার পক্ষে সওয়াল করেছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর মতে, অবিলম্বে এই বিল কার্যকর করতে হবে। তাই জনগণনা এবং ডিলিমিটেশনের জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। রাহুল বলেন, ‘যে মুহূর্তে বিরোধীরা জাতিভিত্তিক জনগণনার বিষয়টি তুলল, বিজেপি একটি নতুন ঘটনা সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিল। যাতে অনগ্রসর সম্প্রদায় ও ভারতের জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কতজন দলিত, ওবিসি এবং আদিবাসী ভারতে আছে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে জাতিভিত্তিক জনগণনা করলে। আর আপনারা যদি তা না করেন তাহলে আমরা করে নেব।’
অন্যদিকে দেশের মহিলাদের জন্য মহিলা সংরক্ষণ বিল অত্যন্ত বড় পদক্ষেপ বলে মনে করেন রাহুল গান্ধী। তবে বিরোধীরা যখনই জাতপাত ভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলল তখনই দেশের মানুষের মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এরকম এক পদক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার বলেও তাঁর দাবি। এদিন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রপতি একজন মহিলা। উনি তপসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। নতুন যে সংসদ ভবনে অধিবেশন শুরু হল সেখানে এমন একটি বিল আনার সময়ে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থাকলে ভাল হতো। বড় পদক্ষেপ হয়েছে পঞ্চায়েতি রাজ–এ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হওয়ায়। আমাদের মহিলারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। তাই তাঁদের আরও ক্ষমতা দেওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: বিধানসভায় পৌঁছেই দিতে হবে ‘অ্যাটেনডেন্স’, বর্ধিত বেতনের পর কড়া পদক্ষেপ সরকারের
এবার প্রশ্ন হল, মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হলেও কার্যকর হতে কতদিন লাগবে? উত্তর, ছ’বছর। কারণ এক, সংসদের দুই কক্ষে পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সই পর্ব দ্রুতই মিটে যাবে। দুই, রুলস তৈরি এবং বিজ্ঞপ্তি জারির পর কার্যকর হবে আইন। তিন, লোকসভা এবং বিধানসভা আসন পুনর্বিন্যাসের পরই আসন সংরক্ষণ সম্ভব। আর সেটা হবে ২০২৬ সালে। কারণ আসন পুনর্বিন্যাস হয় জনগণনার ভিত্তিতে। ২০২১ সালে যে জণগণনা করার কথা, আজও সেটা করে উঠতে পারেনি মোদী সরকার। ২০২৪ সালেও পারবে না। সুতরাং লোকসভা নির্বাচনের আগে চমকের ঘোষণা মোদী সরকার শোনালেও ২০২৪ সালের নির্বাচনে মহিলা সংরক্ষণ হবে না। রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, ‘আমার দেখতে ভাল লাগত যদি এই বিলে ওবিসি সংরক্ষণ অন্তর্ভূক্ত করা হতো। বিলের দুটি বিষয় আমার অদ্ভুত মনে হয়েছে। এক, এই বিল প্রয়োগের জন্য নয়া জনগণনা প্রয়োজন। দুই, তার জন্য আসন পুনর্বিন্যাসও প্রয়োজন। এই দুই প্রক্রিয়া ছাড়াই বিলটির বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ, মহিলারা ভারতীয় নাগরিকদের একটি অংশ। আর অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ, ভারতীয় নাগরিকদের আর একটি অংশ।’