২০২০ সালের ১১ নভেম্বর। আত্মহত্যায় প্ররোরচনার মামলায় সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে আপত্তিকর টুইট করেছিলেন কমেডিয়ান কুণাল কামরা। এর জেরে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছিল। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার শুনানি শুরু হবে। তবে সেই মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপচতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'যেই রায় (অর্ণব গোস্বামীকে জামিন দেওয়ার রায়) নিয়ে এই মন্তব্য করা হয়েছিল, সেটি আমি দিয়েছিলাম। তাই এই মামলা থেকে আমি নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।' মামলার শুনানি দুই সপ্তাহ পরে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও এই মামলার জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে ছিলেন বিচারপচি পিএস নরসিমহা। (আরও পড়ুন: রাতারাতি ৫০ হাজার মানুষকে উৎখাত করা যায় না, রেলের জমি জবরদখল মামলায় নির্দেশ SC-র)
কী ঘটেছিল?
অর্ণব গোস্বামীকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে একাধিক ‘কুরুচিকর’ টুইট করেছিলেন। সেজন্য কমেডিয়ান কুণাল কামরার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুরু হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ইন্টেরিয়ার ডিজাইনার অন্বয় মালিক এবং তাঁর কুমুদ মালিকের আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে অর্ণবকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারপরই শীর্ষ আদালত এবং বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ‘কুরুচিকর’ টুইট করেছিলেন কুণাল। একটি টুইটে কুণাল কামরা সুপ্রিম কোর্টের ছবি ফোটোশপ করে কমলা রংয়ের করে দিয়েছিলেন ও জাতীয় পতাকার জায়গায় বিজেপির পতাকা ব্যবহার করেছিলেন। বিচার-ব্যবস্থা এবং বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অবজ্ঞাপূর্ণ এই টুইট করবার অভিযোগে কুণালকে শোকজ নোটিশ জারি করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। তবে তিনি শীর্ষ আদালতের কাছে ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন কুণাল।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আদালতে পেশ করা হলফনামায় কুণাল লিখেছিলেন, 'আমরা দেখছি বাকস্বাধীনতা ও অভিব্যক্তি প্রকাশের অধিকারের ওপর নির্যাতন চলছে। মুনাওয়ারের মতো কমেডিয়ানরা জেলবন্দি। আর ছাত্রদের জেরা করা হচ্ছে দেশদ্রোহের মামলায়।' তিনি আরও বলেন, 'ক্ষমতাবান মানুষজন কিংবা প্রতিষ্ঠান কী তাদের বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্ন বা সমালোচনার মুখোমুখি হতে ব্যর্থ? এইভাবে তো আমার কারাবন্দি শিল্পী এবং ল্যাপডগ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হব।'
'কুণাল কামরা বনাম অর্ণব গোস্বামী'
এদিকে ইন্ডিগোর উড়ানে 'কুণাল কামরা বনাম অর্ণব গোস্বামী'র পর্ব সকলেরই মনে আছে। এই আবহে অর্ণবের জামিনের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া দিয়ে গিয়ে কুণাল লাগামহীন হয়ে পড়েন বলে মনে করেন অনেকেই। প্রসঙ্গত, এই ঘটনার আগে ২০২০ সালেই একই বিমানে উঠেছিলেন কুণাল ও অর্ণব। একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন কুণাল। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল, মুম্বই-লখনউগামী ইন্ডিগোর উড়ানে অর্ণবকে একাধিক প্রশ্ন করছেন তিনি। উপস্থাপককে 'কাপুরুষ' বলে মন্তব্য করেন কুণাল। 'জাতীয়তাবাদী' বলেও খোঁচা দেন তিনি। অর্ণবের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন ওই কমেডিয়ান। কুণাল অভিযোগ করেন, প্রশ্ন করায় তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেছেন অর্ণব। এই সময় কানে ইয়ারফোন দিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ছিলেন অর্ণব। সেই ঘটনার পরই কুণালকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বিভিন্ন বিমান সংস্থার তরফে। তারপরই অর্ণবের গ্রেফতারি ও জামিন। যা নিয়ে চুপ থাকতে পারেননি জনপ্রিয় এই কমেডিয়ান।