২০২২ সালের ক্যালেন্ডারকে কেন্দ্র করে এবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আইআইটি খড়গপুর। প্রযুক্তিবিদ্যার এই তাবড় প্রতিষ্ঠানে 'সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ফর ইন্ডিয়ান নলেদ সিস্টেম' এর তরফে একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ভারতের বিভিন্ন সভ্যতা থেকে পূরাণ কথা নিয়ে বহুবিধ বিষয় তুলে ধরা হয়। অভিযোগে, এই ক্যালেন্ডারে আর্য আক্রমণ নিয়ে ভারতের ইতিহাসে যে প্রচলিত তত্ত্ব রয়েছে, তার থেকে সরে গিয়ে ভিন্ন তত্ত্ব পরিবেশন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিতর্কে যে বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে, তা হল আর্য আক্রমণ নিয়ে ভারতীয় ইতিহাসে যে প্রচলিত তত্ত্ব রয়েছে, তাকে কার্যত নস্যাৎ করেছে এই ক্যালেন্ডারের বার্তা। ভারতীয় ইতিহাসের বহু পর্যায়ক্রমণ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই ক্যালেন্ডারে। ক্যালেন্ডারের ১২ টি পাতায় রয়েছে সিন্ধ্যু সভ্যতা থেকে চক্রাকার সময়, স্থান সময় কারণ,আর্য ঋষিগণ, শব্দার্থ বিদ্যা সহ একাধিক বিষয়। মূলত, ইতিহাসকে এই ক্যালেন্ডারে বিকৃত করার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। মূলত ক্যালেন্ডারের থিমটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। সেখানে বৈদিক সংস্কৃতি, সিন্ধু সভ্যতা ও ঔপনিবেশিক শাসন নিয়ে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। যা ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
এদিকে, এই ইস্যুতে টুইটারে বিতর্ক অব্যাহত। যেখানে কয়েকজন এই ক্যালেন্ডারের সমর্থনে রয়েছেন, সেখানে অনেকেই এমন ক্যালেন্ডারের ভাবনার বিরুদ্ধে গিয়েছেন। টুইটারে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, এমন এক ক্যালেন্ডার কীভাবে প্রকাশিত করতে পারল আইআইটি, তা নিয়ে। অনেকেই এই তত্ত্বকে অবৈজ্ঞানিক ও ইতিহাস বিরুদ্ধ বলে দাবি করেছেন। অনেকেই ভাষায় আইআইটি খড়গপুর এই ইস্যুতে সম্পূর্ণ 'গিমিক' তৈরি করেছে। আবার অনেকেই টুইটারে লিখেছেন , এই ক্যালেন্ডার 'খুবই সুন্দর হয়েছে।' বহু নেটিজন লিখেছেন , এআইটি মিথ ভাঙতে পেরেছে আইআইটি খড়গপুর।
এদিকে, বিতর্ক উঠেছে আরও অন্য একটি দিক নিয়ে। প্রযুক্তির পীঠস্থলের ক্যালেন্ডারে পূরাণ নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে অরবিন্দ ও স্বামী বিবেকানন্দের ছবি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এই নিয়ে আইআইটি খড়গপুরের সামেন বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেয় 'সারা ভারত শিক্ষা বাঁচাও কমিটি'। তাদের দাবি, হিন্দুত্ববাদী উদ্দেশ্য এমন ক্যালেন্ডার-ভাবনার সঙ্গে জড়িত। তবে আইআইটি খড়গপুরের 'সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ফর ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম'এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক জয় সেন বলেছেন,' আমরা ভাবতেই পারিনি যে আমাদের কাজ বিশ্বজুড়ে এত মানুষের নজর কাড়বে। শেষ ৭২ ঘণ্টায় আমি হাজারেরও বেশি মেল পেয়েছি। এরমধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ টি অভিনন্দনজ্ঞাপনকারী মেল। আর বাকি ১০০ টিতে ছিল কিছু পরামর্শ। আর বাকি ছিল সমালোচনাধর্মী। যেখানে ঔপবিনেশিক ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে পেশ করা বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে মানতে চাওয়া হয়নি।' একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ইউরোপ ও আমেরিকার বহু প্রতিষ্ঠান এই ক্যালেন্ডারের প্রতিটি পাতা নিয়ে আলাদা করে ওয়ার্কশপ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।