দুর্গত দেশগুলিতে কোভিড ভ্যাক্সিন সরবরাহের ক্ষেত্রে যেন প্রতিযোগিতা ও শত্রুতার প্রভাব না পড়ে। সোমবার চিন এই আবেদন জানালেও ভারত ও পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে তৈরি ভ্যাক্সিনের বিরুদ্ধে নাগাড়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে স্বয়ং বেজিংয়ের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমই।
তবে অন্য দেশে তৈরি ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না চিনা সংবাদমাধ্যম, সেই সঙ্গে নিজের দেশের কূটনীতিকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে চিনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও ফলাও করে প্রচার করে চলেছে।
জাতীয় সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বার্তায় বলা হয়েছে, আমেরিকার মেরিল্যান্ড রাজ্যে ফোর্ট ডেট্রিক আর্মি মেডিক্যাল কম্যান্ড-এর এক গবেষণাগারই সম্ভবত করোনাভাইরাসের আতুরঘর।
চিনের জাতীয়তাবাদী সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস-কে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনিইয়িং বলেন, ‘আমেরিকা যদি সত্যকে সম্মান করে, তা হলে দয়া করে ফোর্ট ডেট্রিক খুলে দেওয়া হোক আর আমেরিকার বাইরে থাকা ২০০ বা তার বেশি সংখ্যক গবেষণাগার সম্পর্কে আরও তথ্য জানানো হোক। আর সেই সঙ্গে দয়া করে উৎস সন্ধানী হু-এর বিশেষজ্ঞ দলকে আমেরিকা গিয়ে অনুসন্ধান চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক।’
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বিশেষজ্ঞ দল চিনে অবস্থান করছে। মনে রাখা দরকার, ২০১৯ সালের শেষে চিনের উহান শহরেই প্রথম Covid-19 এর প্রকোপ দেখা দেয়।
বলা বাহূল্য, হুয়ার বিবৃতি সময়োপযোগী। সম্প্রতি চিনের টুইটার সদৃশ ওয়েইবো প্ল্যাটফর্মে কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগ প্রচারিত হ্যাশট্যাগ ‘আমেরিকার ফোর্ট ডেট্রিক’ এক কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে।
পাশাপাশি, গত কয়েক সপ্তাহে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অগুনতি নিবন্ধে ভারতীয় ও ইউরোপীয় কোভিড ভ্যাক্সিনের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি চিনে তৈরি টিকার লাগাতার প্রচার চলেছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে একাধিক প্রতিবেশী দেশে ভারতের ভ্যাক্সিন পাঠানোর যোগ্যতা নিয়েও। আবার বলা হচ্ছে, দেশীয় ভ্যাক্সিনের প্রতি আস্থা না থাকায় ভারতীয়রা চিনা কোভিড টিকার প্রতি বেশি ঝুঁকছেন।
চিনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, ‘পাশ্চাত্য দেশগুলি সংক্রমণে লাগাম দেওয়ার চেষ্টায় ভ্যাক্সিন উৎপাদনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, কিন্তু চিন ভ্যাক্সিন তৈরি করছে সমগ্র বিশ্বের আরোগ্য কামনায়।’
তবে প্রচারের এই ঢেউয়ে না ভেসে চিনা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যেই বেজিংয়ের তথ্য গোপন করার চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। চিনের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংবাদ ওয়েবসাইট কাইক্সিন এমনই এক বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ফার্মাকিউটিক্যাল সায়েন্সেস-এর ডিন এবং গ্লোবাল হেল্থ ড্রাগ ডিসকভারি ইনস্টিটিউট-এর ডিরেক্টর ডিং শেং চিনা ভ্যাক্সিনের ক্নিনিক্যাল ট্রায়ালের আসল তথ্য জনসমক্ষে আনার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর মতে, সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে চিনা ভ্যাক্সিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করা যাবে, যা চিন ও অন্যান্য দেশে নতুন কোভিড সংক্রমণের প্রকোপ রোধ করতে সহায়ক হবে।’