জয়শ্রী নন্দী
ভারত নয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে মঙ্গলবার বাংলাদেশে আছড়ে পড়বে সিত্রাং। একাধিক মডেলে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানাল ভারতীয় মৌসম ভবন। যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগেও ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আছড়ে পড়লেও পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’ প্রক্রিয়া নিয়ে ভারতীয় মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় নজরদারি বিভাগের প্রধান আনন্দকুমার দাস বলেছেন, ‘আপাতত বিভিন্ন মডেল থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে বাংলাদেশ উপকূলে ল্যান্ডফল হবে ঘূর্ণিঝড়ের। তবে পশ্চিমবঙ্গে নিশ্চিতভাবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে। মূলত দুই ২৪ পরগনায় (প্রভাব পড়বে ঘূর্ণিঝড়ের)।' সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘দীপাবলি থেকে (২৪ অক্টোবর) ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া বইবে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। স্থানীয় মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
ভারতীয় মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় নজরদারি বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, গত ২০ বছরে প্রাক-বর্ষার আগে যে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে, তার থেকে বর্ষা-পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের দাপট বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে ‘সিত্রাং’ ততটাও মারাত্মক হবে না বলে জানিয়েছেন ভারতীয় মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় নজরদারি বিভাগের প্রধান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের যেখানে সিত্রাং তৈরি হচ্ছে, সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরিভাগের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকলেও ওই অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই জল ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তার ফলে সিত্রাং আরও শক্তিশালী হয়ে সম্ভবত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে না।’
কবে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে?
মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে,, বৃহস্পতিবার যে জায়গায় শুক্রবার সকালেও সেই অঞ্চলে অবস্থান করছে নিম্নচাপ। যা আগামী কয়েক ঘণ্টায় আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। শনিবার (২২ অক্টোবর) সকালে দক্ষিণ-পূর্ব ও সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তারপর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আরও শক্তিশালী হবে। রবিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে পূর্ব-মধ্য ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপরে সেটি অতি গভীর নিম্নচাপের আকার নিতে পারে।
তারপর খুব সম্ভবত উত্তর দিকে বাঁক নেবে ,সেই অতি গভীর নিম্নচাপ এবং কালীপুজোর সকালে পশ্চিম-মধ্য ও সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের আকার ধারণের পর সেটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলের কাছে পৌঁছাবে।
মৌসম ভবনের বুলেটিন অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিট নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অবস্থান করবে ‘সিত্রাং’। সেইসময় ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিমি বেগে ঝড় হতে পারে। দমকা হাওয়ার বেগ ১১০ কিমিতেও পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বুধবার ভোর ৫ টা ৩০ মিনিটে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই অবস্থান করবে। তবে ঝড়ের বেগ কিছুটা কমতে পারে (ঘণ্টায় ৮৫ কিমি থেকে ৯৫ কিমি বেগে)।
বৃষ্টির পূর্বাভাস
- ওড়িশা: রবিবার ওড়িশার উপকূলবর্তী জেলাগুলির অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। সোমবার ওড়িশার উপকূল লাগোয়া কয়েকটি জায়গায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার উত্তর ওড়িশা উপকূলে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
- পশ্চিমবঙ্গ: রবিবার পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলির অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। পরদিন অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। কয়েকটি জায়গায় (উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর) ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার উপকূলবর্তী জেলাগুলির (উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর) কয়েকটি জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। বুধবার দুই ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ঝড়ের পূর্বাভাস
- সোমবার (২৪ অক্টোবর): ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূল বরাবর ঘণ্টায় ৪৫-৫৫ কিমি বেগে ঝড় বইতে পারে। কখনও কখনও সেই ঝড়ের বেগ ৬৫ কিমিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে।
- মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর): ওড়িশা উপকূলে ঝড়ের দাপট না বাড়লেও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে বাড়বে। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূল বরাবর ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার থাকবে। দমকা হাওয়ার বেগ ১১০ কিমিও ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
- বুধবার (২৬ অক্টোবর): বুধবার সকাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূল বরাবর হাওয়ার বেগ ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিমি থাকবে। সর্বোচ্চ বেগ ১১০ কিমি হতে পারে। তারপর থেকে ক্রমশ ঝড়ের দাপট ক্রমশ কমবে। বিকেল থেকে ৫০-৬০ কিমি বেগে হাওয়া বইবে।