কেন্দ্রের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিশ্চিত করতে আইন আনার জন্য বিক্ষুব্ধ কৃষকদের দাবি উড়িয়ে দিচ্ছে না দিল্লি। বৃহস্পতিবার এমনই ইঙ্গিত দিলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার।
হিন্দুস্তান টাইমস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের দফতরে বসে মন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে এই বিষয়ে আমি হ্যাঁ বা না কোনওটাই বলতে পারব না।’
গত ১৩ নভেম্বর খামার ও খাদ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিবাদী কৃষকদের প্রতিনিধিরা দাবি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের পাশ করানো তিনটি কৃষি আইন সংশোধন করে নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রির বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল তোমার বলেন, ‘সাম্প্রতিক আইনগুলিতে ভিন্ন নির্দেশ রয়েছে। এগুলি কৃষকদের স্বার্থ সহায়ক। এই আইনগুলিতে বিণন ও চুক্তিবদ্ধ কৃষির মতো বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এই তিন আইনের পরিধিতে এমএসপি অন্তর্গত নয়।’
গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে কৃষিপণ্য বিপণনে গতি আনতে সংসদে পাশ হওয়া কেন্দ্রের তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছেন পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দেশের অন্যান্য রাজ্যের কৃষকরা। তার জেরে প্রবল রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
বৃহস্পতিবার হরিয়ানায় কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ কৃষকের দিল্লিগামী মিছিল অবরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পুলিশ। দিল্লিতে কৃষকদের প্রতিবাদ সভা যাতে রোধ করা যায়, সেই উদ্দেশে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রশাসন।
সরকারের দাবি, সাম্প্রতিক আইনি সংশোধনগুচ্ছ বড় মাপের ক্রেতা, সুপার মার্কেটও রফতানিকারীদের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সংযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, নতুন আইন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দামে শস্য কেনার সরকারি নীতি বাতিলের পথ সুগম করবে। তার জেরে একমাত্র বেসরকারি ক্রেতাদের মুখাপেক্ষী থাকতে হবে কৃষকদের। যদিও এর পরেও সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, পূর্ব প্রতিশ্রুতিতে উল্লিখিত দামেই কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য কেনা হবে।
গতকালের সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৩-১৪ সাল এবং ২০২০-২১ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার চালের এমএসপি ৪৩% বৃদ্ধি করেছে। তাঁর মতে, এনডিএ সরকারের আমলে বীজধান সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বিগত ইউপিএ আমলের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এই খাতে কৃষকদের দেওয়া অর্থের পরিমাণ ২০১৪-১৯সালের মধ্যে ৪.৩৪ লাখ কোটিতে দাঁড়িয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। তুলনায় ২০০৯-২০১৪ সালের মধ্যে এই খাতে কৃষকদের মাত্র ২.৮৮ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল বলেও জানান তোমার।
তাঁর দাবি, ‘এমএসপি-র প্রতি আমাদের অঙ্গীকার স্পষ্ট। কৃষিপণ্য সংগ্রহে সরকারি ব্যবস্থা আগের মতোই চালু থাকবে। কৃষক ভাইদের প্রতি আমার অনুরোধ, আমরা আপনাদের সব সমস্যার কথা শুনতে চাই ও তার সমাধান করতে চাই। এই জন্যই আগামী ৩ ডিসেম্বর ওঁদের আবার আলোচনায় ডেকেছি।’
উল্লেখ্য, মোট ২৩টি শস্যের ক্ষেত্রে এমএসপি নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও বাস্তব ক্ষেত্রে কৃষকদের থেকে নির্ধারিত দামে মূলত শস্যই কেনা হয়। এর জেরে কিছুটা উপকৃত হন প্রধান শস্য উৎপাদনকারীরা। তবে অন্যান্য কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে বাজারের দামের উপরেই ভরসা করতে হয় কৃষিজীবীদের।
অন্য দিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, এমএসপি সুনিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের বিষয়টি কৃষকদের জন্য বিশেষ লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার জেরে নির্ধারিত মূল্যের কমে কৃষিপণ্য বিক্রি রোধ করা অসম্ভব।