বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > Cyclone led to Bangladesh's creation: বেজেছিল পাকিস্তানের মৃত্যুঘণ্টা, ঘূর্ণিঝড়ের হাত ধরে কীভাবে তৈরি হয় বাংলাদেশ?

Cyclone led to Bangladesh's creation: বেজেছিল পাকিস্তানের মৃত্যুঘণ্টা, ঘূর্ণিঝড়ের হাত ধরে কীভাবে তৈরি হয় বাংলাদেশ?

ঘূর্ণিঝড় ভোলায় বিধ্বস্ত হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, যা বাংলাদেশ গঠনের পথ প্রশস্ত করেছিল। (ছবিটি প্রতীকী, সৌজন্যে পিটিআই ও টুইটার @NawazUAnsari)

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) উপকূলে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় 'ভোলা' আছড়ে পড়েছিল। যে ঘূর্ণিঝড়কে পরবর্তীতে বিশ্বের সবথেকে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের তকমা দিয়েছিল ‘ওয়ার্ল্ড মেটরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন’। তার জেরেই প্রশস্ত হয়েছিল বাংলাদেশের তৈরির পথ।

দীর্ঘদিন ধিকধিক করে আগুন জ্বলছিল। একটি ঘূর্ণিঝড়েই তা দাবানলে পরিণত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ে যেমন উপকূলে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ে, জলোচ্ছ্বাস হয়, তেমনভাবেই যেন পুঞ্জীভূত ক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল পাকিস্তানের সামরিক সরকারের উপর। আর সেই ঢেউয়ের প্রাবল্য এতটাই ছিল যে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। তৈরি হয় নয়া দেশ- বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) উপকূলে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় 'ভোলা' আছড়ে পড়েছিল। যে ঘূর্ণিঝড়কে পরবর্তীতে বিশ্বের সবথেকে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের তকমা দিয়েছিল 'ওয়ার্ল্ড মেটরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন' বা বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। সেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। তাতে হার মেনেছিল পশ্চিম পাকিস্তান (অধুনা পাকিস্তান)। ১৯৭১ সালে জন্ম হয় বাংলাদেশের। 

ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যাবে, ঘূর্ণিঝড় 'ভোলা'-র দাপটে প্রায় তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। মূলত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূল লাগোয়া নীচু এলাকায় জলোচ্ছ্বাস এবং প্রবল ঢেউয়ের জেরে এত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিলেন হাজার-হাজার মানুষ। কাদার নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন অনেকে। যাঁদের আরও কোনওদিন হদিশ মেলেনি। কেউ-কেউ গাছের ডাল ধরে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি। সেইসঙ্গে রাতারাতি ভিটেমাটি হারিয়েছিলেন লাখ-লাখ মানুষ। চোখের পলকে সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল শস্য। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল একাধিক দ্বীপ। অথচ কোনও মদত করেনি সরকার। 

ভূভাগে ঘূর্ণিঝড়ে আছড়ে পড়ার আগে সরকারের তরফে কার্যত কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’-র আগে রেডিয়ো বার্তায় বারবার 'রেড ৪, রেড ৪' সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ‘রেড ৪’ সতর্কতা কেন জারি করা হয়, খায় না মাথায় দেয়, সেই ব্যাখ্যা করা হয়নি। ফলে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগে নিদেনপক্ষে মানুষ যে বাঁচার চেষ্টা করবেন, সেটাও হয়নি। লাখ-লাখ মানুষকে স্রেফ মরতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাজুমুদ্দিন উপজেলায় ৪৫ শতাংশ মানুষ মারা গিয়েছিলেন (মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬৭,০০০)। 

অথচ এতকিছুর পরেও কার্যত হাত-পা গুটিয়ে বসেছিল জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার। যা নিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষোভের আগুন একেবারে আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিংশ শতাব্দীর সবথেকে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে রাজনৈতিক উথাল-পাতাল শুরু হয়েছিল, সেটাকে কখনও উপেক্ষা করা যায় না। জাত্যাভিমান, স্বতন্ত্র পরিচয়, নিজস্ব সংস্কৃতির লড়াইয়ে অনুঘটক হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ভোলা’। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রদানের জন্য যে আকুতি ছিল, তা গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।

আরও পড়ুন: 'যে আত্মা বাঘের বাচ্চার মতো বলতে পারে জয় বাংলা'

বিষয়টি নিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টির মৌলানি আবদুল হামিদ ভাশানি জানিয়েছিলেন, উপকূলবর্তী এলাকার লাখ-লাখ মানুষের প্রাণরক্ষার ক্ষেত্রে যেভাবে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার হাত গুটিয়ে বসেছিল, তাতে প্রমাণিত হয়েছিল যে সরকার কতটা অপদার্থ ছিল। হামিদই প্রথম রাজনীতিবিদ ছিলেন, যিনি ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। তারপর নোয়াখালি জেলায় দাঁড়িয়ে এক সকালের নমাজের সময় ভাশানিরা শপথ নিয়েছিলেন যে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের উৎখাত করে ছাড়বেন। নয়া দেশ গড়ে তুলবেন।

আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি: 'শরীর টুকরো টুকরো করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়'

আওয়ামি লিগের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বিধ্বস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর যে নির্বাচন হয়েছিল (১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর), তাতে বিপুল জয় পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও। যা পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সরকারের কাছে বড় ধাক্কা ছিল। স্বভাবতই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবদের সেই জয় মানতে রাজি হয়নি পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার। তার জেরে আরও প্রশস্ত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পথ। শেষপর্যন্ত ১৯৭১ সালে ভারতের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছিল নয়া দেশ- বাংলাদেশ।

বন্ধ করুন