আয়কর রিটার্ন দাখিলের (ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন) সময়সীমা ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এই সময় ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করা নিয়ে নিশ্চয়ই চারিদিক থেকে বিভিন্নরকম পরামর্শ ভেসে আসছে। কেউ হয়ত বলছেন যে এই খাতে বিনিয়োগ করেছেন বলে দেখিয়ে দিন, তাহলে করযোগ্য আয় কমে যাবে। কম দিতে হবে আয়কর। কেউ হয়তো আবার ভুয়ো রশিদ তৈরি করে কোনও খাতে অনুদান করেছেন বলে দেখিয়ে দিন। তাহলে আয়কর এক পয়সাও দিতে হবে না। অত কী আর দেখতে যাবে আয়কর দফতর! আর যদি সেটাই কেউ মনে করে থাকেন, তাহলে তিনি বড় ভুল করছেন। কারণ বেতনভোগী করদাতারা যদি আয়কর রিটার্নে ভুল তথ্য বা ভুয়ো তথ্য প্রদান করেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে আয়কর দফতর। অর্থাৎ ভুয়ো ভাড়ার রশিদ থেকে ভুয়ো অনুদানের রশিদ দাখিল করা হয়েছে কিনা, সেদিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। সেরকম কোনও কাজ করলে বড়সড় জরিমানার মুখে পড়তে পারেন আপনি। সেই জরিমানার অঙ্কটা প্রকৃত আয়করের থেকে দ্বিগুণও বেশি হতে পারে।
আয়কর রিটার্নে বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে কর ছাড়
নিয়ম মোতাবেক, আয়কর আইনের ১০ (১৩এ) ধারার আওতায় প্যান কার্ড সংক্রান্ত তথ্য এবং বাড়িওয়ালার পরিচয় না জানিয়েই বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে এক লাখ টাকা পর্যন্ত করছাড় পেতে পারেন। অর্থাৎ কারও যদি বাড়িভাড়ার খাতে বছরে ৯৬,০০০ টাকা খরচ হয়, তাহলে সেটা প্যান কার্ড ও বাড়িওয়ালার তথ্য ছাড়াই আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে উল্লেখ করতে পারবেন। যা তাঁর করযোগ্য আয় ৯৬,০০০ টাকা কমিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন: ITR Filing Deductions: IT রিটার্ন দাখিলের সময় এই ৬টি 'অস্ত্র' কাজে লাগান, এক টাকাও আয়কর দিতে হবে না
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কোনও কোনও করদাতা সেই নিয়মের অপব্যবহার করছেন। তাঁরা ভুয়ো নথি দেখিয়ে করছাড়ের সুবিধা নিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ট্যাক্স টু উইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও অভিষেক সোনি বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ কেউ সেই নিয়মের অপব্যবহার করছেন। তার ফলে আয়কর দফতরের তরফে গুচ্ছ-গুচ্ছ নোটিশ জারি করা হচ্ছে। তাঁরা যে করছাড় নিয়েছেন, সেটা প্রমাণ করার জন্য নথি চাইছে আয়কর দফতর।’
ট্যাক্স টু উইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আরও জানিয়েছেন, করছাড়ের জন্য যে ক্লেম করা হচ্ছে, সেটা কতটা সত্যি, তা যাচাই করে দেখতে সার্বিকভাবে পদক্ষেপ করছে আয়কর দফতর। আয়কর রিটার্নে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেই তথ্যের সঙ্গে অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। নিজেরা যে তথ্য প্রদান করেছেন করদাতারা, তা তাঁদের দিয়েই যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ট্যাক্স টু উইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও।
আর সেক্ষেত্রে কোনও যদি অসঙ্গতি ধরা পড়ে, তাহলে নোটিশ পাঠাতে পারে আয়কর দফতর। সেক্ষেত্রে জরিমানার অঙ্কটা প্রকৃত আয়করের ২০০ শতাংশ পর্যন্তও হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ট্যাক্স টু উইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। সেই পরিস্থিতিতে কোন কোন বিষয় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে, তা দেখে নিন -
১) কোনওরকম ঝঞ্জাট এড়াতে করফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না।
২) বাড়িভাড়া দেখালে বৈধ চুক্তি রেখে দেবেন।
৩) অনলাইনে বা চেকের মাধ্যমে বাড়িভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
৪) বাড়িভাড়া এক লাখ টাকার বেশি হয়ে গেলে বাড়িওয়ালার প্যান কার্ড নম্বর দিতে হবে।
৫) যে যে ক্ষেত্রে ডিডাকশন ক্লেম করেছেন, সেগুলির তথ্য রেখে দিতে হবে।
কোন কোন আয়কর নোটিশ ধরানো হতে পারে?
আয়কর আইনের একাধিক ধারার আওতায় নোটিশ ধরানো হতে পারে। সাধারণত আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা, দেরিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা, আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ভুল তথ্য প্রদান, ভুল আয়কর রিফান্ড ক্লেম করার মতো একাধিক কারণে নোটিশ দিতে পারে আয়কর দফতর। সেক্ষেত্রে আয়কর আইনের ১৪৩ (১) ধারা, ১৪২ (১) ধারা, ১৩৯ (১) ধারা, ১৪৩ (২) ধারা, ২৪৫ ধারা এবং ১৪৮ ধারার আওতায় নোটিশ জারি করা হয়।