সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই সুদান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের উদ্ধারের অভিযান শুরু করা হয় সোমবার। এরই মধ্যে ইদ উপলক্ষে সেদেশে ৭২ ঘণ্টার সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। সেই সুযোগেই ৫৩৪ জন ভারতীয় নাগরিককে সেখান থেকে সরিয়ে আনল ভারতীয় নৌসেনা ও বায়ুসেনা। এর মধ্যে ২৭৮ জনকে পোর্ট সুদান থেকে তুলে নেয় নৌসেনার আইএনস সুমেধা। অপরদিকে দুই দফায় আরও ২৫৬ জনকে সি-১৩০জে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় সৌদি আরবের জেদ্দায়। অপারেশন কাবেরীর অধীনে ভারতীয় নাগরিকদের সুদান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার জেদ্দায় যান কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলিধরন। বায়ুসেনার বিমানে করে সুদান থেকে উদ্ধার হওয়া ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। মন্ত্রী জানান, জেদ্দা থেকে সেই ভারতীয় নাগরিকদের শীঘ্রই ভারতের উদ্দেশে পাঠানো হবে। এদিকে সুদানের রাজধানী থেকে পোর্ট সুদানের দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিমি। এই আবহে সেদেশে থাকা সকল ভারতীয় নাগরিক এখনও পোর্ট সুদানে এসে পৌঁছতে পারেননি। তবে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে যে সুদানে থাকা সকল ভারতীয়কেই উদ্ধার করা হবে।
সরকারি তথ্য বলছে, গৃহযুদ্ধের আগে সুদানে প্রায় ২৮০০ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। এদিকে সুদানে ১২০০ ভারতীয় বংশোদ্ভূত থাকেন। এরা প্রায় ১৫০ বছর ধরে বংশানুক্রমে সেখানে থাকেন বলে জানা গিয়েছে। এই আবহে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। পরে সুদানে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। নৌসেনার প্রধান আর হরিকুমার ও বায়ুসেনার প্রধান বি আর চৌধুরী এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মিশর ও সৌদির রাষ্ট্রদূতরাও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১০ দিন আগে সুদানে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে সেদেশের আধাসামরিক বাহিনীর। এই সংঘর্ষে গতকাল পর্যন্ত তিনজন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সেদেশের চিকিৎসক ইউনিয়ন। খারতুম বিমানবন্দরেও এক সাধারণ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে গৃহযুদ্ধের মাঝে আধা সামরিক বাহিনী দাবি করে, বিমানবন্দর এবং রাষ্ট্রপতি ভবন দখল করেছে তারা। যদিও সেনা সেই দাবি নাকচ করে দেয়। জানা গিয়েছে, এই সংঘর্ষের মূলে রয়েছে সামরিক নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং তাঁর অধীনস্থ আধাসামরিক কমান্ডার মহম্মদ হামদান দাগলোর বিবাদ। আধাসামরিক বাহিনীর র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সকে (আরএসএফ) সেনার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া নিয়ে এই বিবাদ শুরু হয় বিগত কয়েক সপ্তাহ আগে। সেই বিবাদের জেরেই শনিবার থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে বন্দুক তুলে নিয়েছে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী। সংঘর্ষ বিরতির আগে পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ৪২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক ভারতীয় নাগরিক। এছাড়াও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩,৭০০ জন।