গাফিলতির কারণেই কেরালায় ফের কোভিড সংক্রমণের হার লাগামছাড়া, স্বীকার করলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। অন্য দিকে, সোনা পাচারকাণ্ডে সরকারি দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে বিরোধীদের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
সোমবার দুটি মৃত্যু-সহ কেরালায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬২। সাম্প্রতিক সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য রাজ্যবাসীর গাফিলতিকে কাঠগড়ায় তোলেন বিজয়ন। এই দিন রাজ্যে ১০০টি পরিবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করার সময় তিনি বলেন, প্রথম দিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চললেও পরে তাতে ঢিলেমি দেখা দেওয়াতেই সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে।
তবে এর জন্য তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের নয়, রাজ্যবাসীর একাংশকেই দূষছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাজ্যে ১০,০০০ আক্রান্ত হতে সময় লেগেছিল ৫ মাস, কিন্তু দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে তা ২৫,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে স্রেফ সামগ্রিক গাফিলতির সুবাদে। সেই সঙ্গে বিরোধীদের বিরুদ্ধেও তিনি আক্রমণ শানিয়ে অভিযোগ করেছেন, রাজ্য প্রশানকে খাটো করতে সর্বদা সংক্রমিতের সংখ্যা নিয়ে গলা তুললেও সুস্থতার হার নিয়ে কখনও কথা বলেন না বিরোধী নেতারা।
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিরোধী নেতা রমেশ চেন্নিথালা জানিয়েছেন, সংকটের ব্রাহ্মমুহূর্তে পৌঁছে নিজের দোষ কবুল করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে কোভিড ছাড়াও এই মুহূর্তে বিজয়নকে সবচেয়ে বেশি চাপে রেখেছে কেরালার সোনা পাচার কাণ্ডের তদন্তে একের পর এক সরকারি আমলা ও মন্ত্রীর নাম উঠে আসা। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যে তাঁর ইস্তফা দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বিরোধীরা।
কয়েক দিন আগে দিল্লিতে বিজয়নের পদত্যাগের দাবিতে দিল্লিতে ধরনায় বসেন বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরণ। আবার সোমবার তিবনন্তপুরমে অর্ধদিবস প্রতীকী অনশনে বসে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী নেতা রমেশ চেন্নিথালা। অনলাইনে সেই অনশনের উদ্বোধন করার সময় কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়াসনিক বলেন, ‘সোনা পাচার কাণ্ডে ব্যক্তিগত সচিবের নাম জড়ানোর পরে মুখে কুলুপ এঁটেছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। পিনারাই বিজয়ন হলেন কেরালার নরেন্দ্র মোদী এবং তিনি কখনও সুস্থ সমালোচনা বরদাস্ত করেন না। তবে এবার প্রথম এমন আচরণ দেখাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর।’
সোনা পাচারকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত স্বপ্না স্বরূপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার দায়ে এর আগেই সাসপেন্ড হয়েছেন বিজয়নের ব্যক্তিগত সচিব এম শিবশংকর।
এর পরে সোনা পাচার কাণ্ডে নাম জড়ায় কেরালার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী কে টি ব জলিললেরও, যখন স্বপ্না সুরেশের কল লিস্টে তাঁর নাম দেখা যায়। যদিও রমাদানে দুঃস্থ শিশুদের উপহার দেওয়ার জন্য তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছিল বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন জলিল, তবু ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মন্ত্রিসভার সদস্য হয়ে কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া আমিরশাহি দূতাবাস থেকে উপহার গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ওঠায় কোনঠাসা হয়ে পড়েন জলিল।
সব মিলিয়ে কেরালার মসনদে পিনারাই বিজয়নের অধিষ্ঠান ঘিরে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তাকে কী ভাবে সামাল দিতে পারেন পোড়খাওয়া বাম নেতা, সে দিকেই চোখ রয়েছে আপামর ভারতের।