দীর্ঘ ছয় বছর ধরে লড়াই চালাচ্ছিলেন। অবশেষে ইউটিউব দেখে পুলিশ ও প্রশাসনের লাল ফিতের জট কাটিয়ে পাসপোর্ট পেলেন বিশাল মৃদুল মণ্ডল (২৯)। যিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন থেকে বিশালকে অনাথ আশ্রমে নিয়ে এসেছিল। ২০১৪ সালে মুম্বইয়ে চলে আসেন। সেখানে মুম্বই সেন্ট্রাল স্টেশনের উলটোদিকে একটি স্বেচ্ছাবেসী সংস্থায় থাকতেন। দিনে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার 'চাইল্ড হেল্পলাইন' নম্বরে কাজ করতেন। তারপর একটি প্রথমসারির হোটেলে হাউসকিপিংয়ের কাজ করতেন বিশাল। সেইসময় বিশাল জানতে পেরেছিলেন যে তাঁর এক বন্ধু একটি ক্রুজে কাজ করছেন এবং বিদেশে যাচ্ছেন। তারপর বিশাল ভেবেছিলেন যে ‘আমিও যেতে পারব।’
সেইমতো পাসপোর্ট তৈরির জন্য হত্যে হয়ে পড়ে থাকেন বিশাল। ২০১৬ সালে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশাল বলেন যে তাঁর নথিপত্রে অনুমোদন দিয়েছিল পাসপোর্ট অফিস। কিন্তু বিপত্তি বাধে পুলিশের যাচাই পর্বের সময়। সরকারি আবাসনকে বিশালের বাড়ির ঠিকানা (মুম্বইয়ের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঠিকানা দিয়েছিলেন) হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
বিশাল অথৈ জলে পড়লেও পাশে দাঁড়ায় ওই প্রথমসারির হোটেল। যে হোটেলে কাজ করতেন বিশাল। ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশাল জানিয়েছেন যে ওই হোটেলের বেসমেন্টে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। সেইমতো আধার কার্ড, ভোটার কার্ডে ঠিকানা পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু ফের পুলিশি যাচাই পর্বে আটকে গিয়েছিল বিশালের পাসপোর্ট স্বপ্ন। বিশাল বলেছেন, 'যখন কেউ চা-জলের কথা বলেছেন, আমি হাতজোড় করে বলেছি যে আমি দুঃখিত। আমি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছি। আমায় সৎ পথে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।'
তারইমধ্যে ২০১৮ সালে দিল্লিতে ফিরে আসেন বিশাল। ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুঘলকাবাদের একটি শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে থাকছিলেন। সেই ঠিকানায় পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন বিশাল। যিনি ১৮ বছর হওয়ার পর জানতে পারেন যে তাঁর কোথায় জন্ম হয়েছে, তাঁর বাবা ও মায়ের পরিচয়। কিন্তু দিল্লিতেও পুলিশি যাচাই পর্বে আটকে গিয়েছিল বিশালের স্বপ্ন।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশাল জানিয়েছেন যে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় চাকরি হারিয়েছিলেন। সেইসময় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় মাসির বাড়িতে চলে এসেছিলেন। ফের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জন্ম সংক্রান্ত তথ্য অস্পষ্ট থাকার কারণ দর্শিয়ে ফের বিশালের পাসপোর্টের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে তাঁকে দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা।
তবে দমে যাননি বিশাল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক আমলাকে ইমেল করেন। গত বছর অভিযোগ দায়ের করেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারপরই তড়িঘড়ি ময়দানে নামেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকরা। কিন্তু তাতেও পাসপোর্ট মেলেনি। শেষপর্যন্ত দিল্লিতে শিক্ষা কল্যাণ কমিটির দ্বারস্থ হন। উত্তর দিল্লি পুরনিগম এবং শিক্ষা কল্যাণ কমিটির দড়ি টানাটানির পর জন্মের শংসাপত্র পান বিশাল। কিন্তু তাতে পদবির উল্লেখ ছিল না। আবারও আবেদন করেন বিশাল। সেই ভুল শুধরে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: PETA calls for Sex Strike: 'পুরুষরা মাংস খেলে সেক্স নয়, ভেগান হলে তবেই..', মহিলাদের পরামর্শ PETA-র
তারপর গত বছর জীবনতলার ঠিকানায় ফের পাসপোর্টের আবেদন করেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশাল ভারতীয় নাকি বাংলাদেশি - সেই প্রশ্নও শুনতে হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে ইউটিউব ঘাঁটতে শুরু করেন বিশাল। কীভাবে আবেদন মামলা করতে হয়, তা নিয়ে ভিডিয়ো দেখেন। জুভেনাইল জাস্টিস আইন এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়ম নিয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু বাংলায় কোনও সহায়তা না মেনে দিল্লি ফিরে আসেন বিশাল। তারপর নতুন করে দিল্লির শিশুকল্যাণ কমিটিতে বিষয়টি ওঠে। অবশেষে চলতি বছরের এপ্রিলে তাঁকে অনাথ শংসাপত্র দেয় দিল্লির শিশু কল্যাণ কমিটি। অবশেষে ২২ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট। যিনি আপাতত গুরুগ্রামে এক বেলজিয়ান পরিবারে কাজ করছেন এবং কানাডায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।