দিনের পর দিন, মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে, তবে মণিপুরে হিংসা থামার নাম নেই। এই আবহে এই সংক্রান্ত মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। গতকাল সেই মামলারই শুনানি হয় শীর্ষ আদালতে। এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, 'রাজ্য সরকারের করা পদক্ষেপের ওপর আমরা কেবলমাত্র নজরদারি করতে পারি। যদি অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে নির্দিষ্ট আদেশ দিতে পারি। কিন্তু আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারি না।' এদিকে মামলাকারীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'কোনও পোক্ত পরামর্শ না থাকলে এখানে আসবেন না। আপনাদের সংশয়ের কারণে শীর্ষ আদালত আইনশৃঙ্খলার ভার নিজেদের কাঁধে নিতে পারে না।' (আরও পড়ুন: বাংলায় আসবে বিজেপির দল, পালটা হিংসা কবলিত মণিপুরে যাবেন তৃণমূলের ৫ সাংসদ)
মামলাকারীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির পর্ষবেক্ষণ, 'আমরা আপনার অনুভূতি বুঝতে পারছি। তবে এই আদালতের সামনে তর্ক করার কিছু পদ্ধতি থাকা উচিত। এই ইস্যুটিকে পক্ষপাতমূলক বিষয় হিসাবে না দেখে মানবিক সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত। আমরা চাই না যে এই আইনি প্রক্রিয়াটি রাজ্যের সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াক বা অন্যান্য সমস্যা বৃদ্ধি করুক। এর জন্য সুপ্রিম কোর্টকে প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিচালনা করি না। আপনার পরামর্শ থাকলে আমরা তা গ্রহণ করতে পারি।'
উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অভিযোগ উঠেছে কুকি ‘জঙ্গিরা’ অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই আবহে কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে সেই রাজ্যে।
প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছে যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এই আবহে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই আবহে গত এপ্রিল মাসে এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ।