উৎপল পরাশর
রবিবারের অলস দুপুর। মণিপুরে অবশ্য অন্য ছবি। একটি গ্রামে ঢোকার মুখে বসে রয়েছেন অন্তত জনা ষাটেক মহিলা। তাঁদের চোখ রাস্তার একাধিক গাড়ির দিকে। আসলে সন্দেহভাজন কেউ আসছে কি না সেদিকেই নজর রাখছেন তারা। বাড়িতে থেকে নয়। একটি ছাউনির নীচে বসে নজরদারি করছেন তাঁরা। তাঁরা সকলেই মৈতেয়ী সম্প্রদায়ের। কুকি সম্প্রদায় যাতে অতর্কিতে হামলা চালাতে না পারে তার জন্য এই উদ্যোগ। কিছু জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে তারা কুকি হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
হিউম পাইপ, কাঠের গুঁড়ি, বাঁশ দিয়ে তারা একাধিক জায়গায় রাস্তা আটকে রেখেছেন। অল্প জায়গা দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করতে পারছে।
এদিকে গত ৪ মে এই নংপোক সেকমাই থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে বি ফাইনোম গ্রামে সেই ভয়াবহ ঘটনা হয়েছিল। মৈতেয়ীদের গ্রামে হামলা হয়েছিল।একাধিক বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। আর সেদিনই দুই মহিলাকে কার্যত নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছিল এলাকায়। ২১ বছর বয়সি এক তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল।
এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ রয়েছে। কিন্তু তবুও যেন আতঙ্ক কাটছে না। থমথমে গোটা এলাকা সুরজিৎ কুমারী নামে এক মহিলা জানিয়েছেন, আমাদের গ্রামটা কুকিদের গ্রাম থেকে কাছেই।আমরা কিছুতেই নিরাপদ বোধ করছি না। কাছে পাহাড় থেকে গুলি চালাচ্ছে। সেকারণেই আমরা একজায়গায় জোট বেঁধে রয়েছি। বাইরে থেকে যে গাড়ি আসছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
সিনাম স্বর্ণলতা লেইমা, মৈতেয়ীদের মহিলা সংগঠনের নেত্রী তিনি। তিনি বলেন, আমরা জানতাম না দুজন কুকি মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছে বলে। ৩ মে মৈতেয়ীদের খুন করা হয়েছে। তাদের বাড়ি পোড়ানো হয়েছে। চূড়াচান্দপুরে মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই রাতেই কাছের পাহাড় থেকে আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চলেছে।
এর জেরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। ৪ মে ৭০০০ মৈতেয়ী বাসিন্দা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। চূড়াচন্দপুরের ঘটনার কথা শুনে বি ফইনম গ্রামের দিকে ওরা বদলা নিতে গিয়েছিল। তবে তাদের দাবি, ৪ মের ঘটনা তারা সমর্থন করেন না।
স্বর্ণলতা বলেন, একটা ঘটনার জন্য় গোটা মৈতেয়ী সম্প্রদায়কে কেন বদনাম করছেন ? সেই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শাস্তি চাইছি আমরাও। অভিযুক্তদের গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাার কোনও দিন গ্রামে ফিরতে পারবে না।