অপ্রাপ্তবয়স্করা কতক্ষণ ভিডিয়ো গেম খেলতে পারবে, সম্প্রতি সেই সংক্রান্ত একটি নতুন আইন চালু করেছে চিন৷ সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তার একটি রূপরেখাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
বিশ্বে ভিডিয়ো গেমের সবচেয়ে বড় বাজার চিন৷ বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান নিউজুর হিসেবে চলতি বছর ভিডিয়ো গেমের বাজারের আকার চার হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে৷ চিনে তরুণদের মধ্যে ক্রমশ ভিডিয়ো গেমে সময় কাটানোর প্রবণতা বাড়ছে৷ কিন্তু শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে এটি রীতিমতো আসক্তিকে পরিণত হচ্ছে, যা নিয়ে চিন্তিত কর্তৃপক্ষ৷ তাদের জন্য এমনকী ক্লিনিকও খুলেছে সরকার, যেখানে নানা থেরাপি দিয়ে আসক্তদের ভিডিয়ো গেম থেকে দূরে রাখার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷
কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারছে না সরকার৷ এবার আইন করে ভিডিয়ো গেম খেলার নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে৷ গত সোমবার থেকে চালু হওয়া নতুন এই আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সিরা সপ্তাহে তিন ঘণ্টার বেশি ভিডিযো গেম খেলতে পারবে না৷ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ন্যাশনাল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনপিপিএ) বলছে আইনটি করা হয়েছে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই৷
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চিনের ৬২.৫ শতাংশ শিশু-কিশোর অনলাইনে গেম খেলে৷ কর্মদিবসে ১৩ শতাংশের বেশি শিশু দৈনিক দু'ঘণ্টারও বেশি সময় মোবাইল গেমে যুক্ত থাকে৷ শিশু-কিশোরদের ভিডিয়ো গেমে আসক্তি কমানোর এমন আইনি উদ্যোগ এবারই প্রথম নয়৷ ২০১৯ সালেও এমন একটি আইন পাস করা হয়েছিল৷ তাতে কর্মদিবসে দেড় ঘণ্টার ও ছুটির দিনে তিন ঘণ্টার কম সময় গেম খেলার জন্য বেঁধে দেওয়া হয়৷ রাত ১০ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত গেমিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের এই সংক্রান্ত মাসিক ব্যয় বয়সভেদে ২৮ থেকে ৫৭ ডলারের মধ্যে সীমিত করে দেয়া হয়৷
অনলাইনে ভিডিয়ো গেম খেলার ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রকৃত নাম পরিচয়, এমনকী জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দেওয়ারও বাধ্যবাধকতা আছে চিনে৷ টেনসেন্ট ও নেটইজ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সিস্টেমও সেভাবেই তৈরি করেছে৷ অপ্রাপ্তবয়স্করা যাতে রাতে বাবা-মার পরিচয় ব্যবহার করে লগইন করতে না পারে সেজন্য গত জুলাইতে টেনসেন্ট চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও চালু করে৷
নতুন আইন অনুযায়ী, পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ বছরের কম বয়সিরা সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনলাইনে গেম খেলতে পারবে না৷ শুধু শুক্র, শনি ও রবিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এক ঘণ্টা করে খেলার সুযোগ পাবে৷ এই নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনলাইন গেমিং কোম্পানিগুলোকে তাদের সিস্টেম তৈরি করতে হবে৷ ব্যবহারকারীরা যেন যথাযথ পরিচয় দিয়ে লগইন করে সেটিও তাদের নিশ্চিত করতে হবে৷
এই নিয়ম ঠিকমতো পালন করা হচ্ছে কিনা. তা নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়াবে বলে জানিয়েছে এনপিপিএ৷ কোনও কোম্পানি আইন ভঙ্গ করলে তদন্ত করে তাদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে তারা৷ বিধিনিষেধ এড়াতে শিশুরা যাতে বড়দের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে অভিভাবক ও স্কুলগুলোকেও নজরদারি বাড়াতে বলেছে কর্তৃপক্ষ৷