মার্কিন সি-১৭ বিমানের চাকা আঁকড়ে থাকা কয়েকজন পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছিল একাধিক প্রতিবেদনে। এক ব্যক্তির দাবি, দু’জন মৃতদের মধ্যে একজনকে কাবুলের হটখিল গ্রামের বাসিন্দা শফিউল্লা হোতাককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি সম্ভবত চিকিৎসক ছিলেন। অন্যজনকে ফিদা মহম্মদ কার্ঘার বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ফিদা মহম্মদের দেহে কোনও পরিচয় চিহ্ন বা আংটি, ঘড়ি, ব্রেসলেট খুঁজে পাননি তিনি।
এই নিয়ে স্ক্রলকে ভিডিয়ো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওই আফগানি ব্যক্তি, যাঁর বাড়ির ছাদে মার্কিন বিমান থেকে ওই দু’জন আফগান নাগরিকের ছিন্নভিন্ন দেহ পড়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাবুলের উত্তর-পশ্চিমে খাইর থানা জেলার ১১ নম্বর দোতলা বাড়িতে থাকেন পেশায় নিরাপত্তারক্ষী ৪৭ বছরের ওয়ালি সালেক। কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁর বাড়ি প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে।
মঙ্গলবার বিকেলে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে স্ক্রল ডট ইনকে সালেক বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। আমার মেয়েরা রান্না করছিল। আর দুই ছেলে তখন ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎই ছাদের উপর বোমা বিস্ফোরণের মতো একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই। তখনই দেওয়াল ও সিলিং থেকে প্লাস্টার খসে পড়ে। সালেক বলেন, ‘বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে প্রতিবেশীরাও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। কীসের আওয়াজ হল, তা দেখার জন্য বাড়ির ছাদে যাই।’ তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি ছাদে তখন ওইরকম ভয়াবহ দৃশ্য আমার জন্য অপেক্ষা করছে। উপরে গিয়ে দেখি, ছাদ জুড়ে চাপচাপ রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তার মধ্যেই তালগোল পাকানো দু’টি দেহ পড়ে রয়েছে। দেহ দু’টি সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের পেট ও মাথা ফেটে গিয়েছিল। এমনকী, তাঁদের মাথার ঘিলু পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছিল।’
সালেক আরও বলেন, ‘ লাশগুলো পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে, তাঁরা হয়ত তালিবানি লোক। যাদের বিমান থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশীরা আমাকে জানান যে, তাঁরা ওই দু’জন লোককে প্লেনের চাকা ধরে ঝুলতে দেখেছিলেন।’ সালেক বলেন, ‘আমার স্ত্রী জাকিয়া সালেক আমার পিছন-পিছন ছাদ পর্যন্ত এসেছিলেন। কিন্তু ওই লাশগুলো দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। আমি তাঁকে ঘরে নিয়ে যাই। তারপর ১০-১২ জন প্রতিবেশীকে জড়ো করি। তাঁরা এসে লাশগুলোকে কাপড় ও কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে ফেলেন। দুপুর ১টায় লাশগুলোকে নিকটস্থ আমির হামজা মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়।’
সালেকের প্রতিবেশী বাসিন্দা আবদুল ওয়াজিদ বলেন, ‘ মৃতদেহগুলো স্থানীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার মৌলবি তাঁদের জামার উপরে পরা কোটের জিপ পকেট থেকে দু’জনের পরিচয়পত্র খুঁজে পান। সেখান থেকেই মসজিদ কর্তৃপক্ষ একজনকে শফিউল্লাহ হোতাক সম্ভবত ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়স হতে পারে বলে শনাক্ত করে। অপরজনকে কাবুলের পাঘমান শহরের বাসিন্দা ফিদা মহম্মদ সম্ভবত ২০ বছর বয়স হতে পারে বলে শনাক্ত করা হয়।’
সালেকের দাবি, কাবুলের হটখিল গ্রামের বাসিন্দা শফিউল্লা হোতাক একজন চিকিৎসক ছিলেন ও ফিদা মহম্মদ কার্ঘার বাসিন্দা। তবে ফিদা মহম্মদের দেহে কোনও পরিচয় চিহ্ন বা আংটি, ঘড়ি, ব্রেসলেট খুঁজে পাননি। এরপর তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সালেক বলেন, ‘মসজিদে লাশগুলো ছাড়ার পর বাড়ি ফিরে এসে ছাদ থেকে মাংসের অবশিষ্ট অংশগুলো ধুয়ে ফেলি। তারপর সন্ধ্যায় শিফট শুরু করার জন্য ট্যাক্সি নিয়ে শহরের দিকে চলে যান।