রেজাউল লস্কর
একাধিকবার আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। কিন্তু নেপালের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাই এবার কালাপানি-লিপুলেখ সীমান্ত বিবাদ সমাধানে 'ইতিবাচক এবং সহায়ক পরিবেশ' তৈরির ভার পড়বে কাঠমান্ডুর উপর। এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
নাম গোপন রাখার শর্তে আধিকারিকরা জানান, সীমান্ত বিবাদ নিয়ে বারেবারে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। শেষ প্রস্তাবটি ছিল - দু'দেশের বিদেশ সচিবের মধ্যে আলোচনা। তবে সেই প্রস্তাবের কোনও জবাব পায়নি নয়াদিল্লি। এক আধিকারিক বলেন, 'যখন নেপালের সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করা হচ্ছে এবং তার আগে দু'দেশের বিদেশ সচিবের মধ্যে ফোনে কথা বলা, ভিডিয়ো কনফারেন্স এবং সফরের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। তবে নেপাল সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি এবং বিলটি পাশের জন্য এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এখন আলোচনার জন্য ইতিবাচক এবং সহায়ক পরিবেশ তৈরির দায় বর্তাচ্ছে।'
আধিকারিকদের বক্তব্য, ভারতীয় ভূখণ্ড নিয়ে নয়া মানচিত্র প্রকাশ করার একতরফা পদক্ষেপের ফলে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং ‘কোনও আলোচনার জন্য ফলাফল আগে থেকেই ভেবে নিয়েছিল (নেপাল)।’ তবে এটা পরিষ্কার নয় যে কেন নিজের দেশের জনগণ বা সংসদকে ভারতের আলোচনার প্রস্তাবের কথা জানাননি প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।
যদিও নেপালের আধিকারিকদের দাবি, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে'র মধ্যে নয়াদিল্লিকে তিনবার আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে কাঠমান্ডু। কিন্তু কোনওবারই কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বলে দাবি নেপালের আধিকারিকদের।
এরইমধ্যে গত মাসে যখন লিপুলেখ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তা চালু করে ভারত, তখন দু'দেশের মধ্যে ভারত সীমান্ত বিবাদ শুরু হয়। কৈলাস মানস সরোবরের তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেই রাস্তা চালু করা হয়েছে জানিয়েছে ভারত।
যদিও সেই রাস্তা নিয়ে প্রতিবাদ জানায় নেপাল। তারপর লিমপিয়াধুর, লিপুলেখ এবং কালাপানিকে যুক্ত করে নয়া মানচিত্র প্রকাশ করে ওলি প্রশাসন। গত সপ্তাহে মানচিত্র পরিবর্তনের সংবিধান সংশোধনী বিল সংসদের নিম্নকক্ষে পাশ হয়ে গিয়েছে। চলতি সপ্তাহে সংসদের উচ্চকক্ষে সেই বিল পেশ করা হবে।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভারত এবং নেপালের ১,৭৫০ কিলোমিটার স্থল এবং জল সীমান্ত স্পষ্টভাবে বর্ণিত। শুধুমাত্র উত্তরাখণ্ডের কালাপানি এবং বিহারের সুস্তা সেক্টর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নেপালের এই ‘পরিবর্তনীয়’ দাবি ১৮১৫ সালে সুগাউলি চুক্তির বিপরীতমুখী। যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল নেপাল এবং ব্রিটিশরা। একইভাবে ১৯৬১ সালে নেপাল-চিনের সীমান্ত চুক্তি এবং দু'দেশের স্বাক্ষরিত ১৯৬৩ ও ১৯৭৯ সালের প্রোটোকলের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কাঠামান্ডুর অবস্থান পরিবর্তন।
এক আধিকারিক বলেন, ‘ওদের (নেপাল) নয়া মানচিত্র তথ্য এবং প্রমাণের উপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়নি। মানচিত্র প্রকাশ এবং সংসদের নিম্নকক্ষে বিল পাশের পর কালাপানি থেকে লিমপিয়াধুর এবং সুস্তা এলাকায় নিজেদের নিজেদের দখলে আনতে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে নেপাল সরকার।’
নেপালের নয়া মানচিত্রকে 'রাজনৈতিক ফায়দার হাতিয়ার' হিসেবে উল্লেখ করে ওই আধিকারিক বলেন, 'মানচিত্র পরিবর্তনে নেপালের একতরফা কাজ এবং সংসদে সংবিধান সংশোধনের দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ওলি এবং তাঁর সরকারের সীমান্ত বিষয়ে রাজনীতির রং লাগানোর ইচ্ছা ফুটে উঠেছে। এই কাজের মাধ্যমে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত মিটিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নেপালের গাম্ভীর্য তুলে ধরছে না এবং এই কাজগুলি দূরদৃষ্টিহীন এবং সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তাশীল।'