মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষে আমেরিকা জড়িয়েছে আরও কয়েক দশক আগে। এর জেরে ৯/১১-এর মতো ভয়াবহ হামলা হয়েছিল সে দেশে। সেই হামলার মাস্টারমাইন্ড ওসামা বিন লাদেন একটি চিঠি লিখে 'আমেরিকা বিরোধিতার কারণ' তুলে ধরেছিল ২০০২ সালে। ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর সেই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। আর গাজায় ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের মাঝে ফের একবার ভাইরাল হল লাদেনের সেই চিঠি। টিকটকে সেই চিঠি ৫০ লাখ লোক দেখে ফেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। ভাইরাল হয় #lettertoamerica ট্যাগের পোস্ট। পরে টিকটক তা সরিয়ে দেয়। সেই চিঠিতে প্যালেস্তাইন-ইজরায়েল সমস্যার কথাও উল্লেখ করা ছিল। সেই সমস্যা না মেটানোর জন্য আমেরিকাকে তোপ দেগেছিল লাদেন। এই আবহে খ্রিস্টানদের রক্ত দিয়ে মার্কিন ঔদ্ধতার জবাব দেওয়ার বার্তা দিয়েছিল লাদেন। এই আবহে লাদেনের সেই চিঠির বক্তব্যকে অনেক আমেরিকানই সমর্থন করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিতর্ক শুরু হয়েছে এই চিঠি ঘিরে। (আরও পড়ুন: ফের উত্তেজনা হরিয়ানার নুহ-তে, মহিলাদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া হল পাথর, জখম ৯)
সোশ্যাল মিডিয়ায় লাদেনের এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ জো বাইডেনের নীতির সমালোচনা করেছেন। আবার এই চিঠিকে সমর্থন জানানো ব্যক্তিদের সমালোচনায় মুখর হয়েছে অপর পক্ষ। সেই চিঠিতে লাদেনে বক্তব্য ছিল, 'আমেরিকা আমাদের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক সৈন্য নামিয়েছে। আমাদের উপর অত্যাচার করেছে। আমাদের জমি কেড়ে নেওয়ার জন্য ইজরায়েলিদের সঙ্গে একটি জোট গঠন করেছে। এটাই ১১ তারিখে আমাদের হামলার মূল কারণ ছিল। কয়েক দশক ধরে ইজরায়েলের দখলে রয়েছে প্যালেস্তাইন। তবে আমেরিকার কোনও প্রেসিডেন্ট এই বিষয়ে কোনও কথা বলেননি। প্যালেস্তাইনকে আর বন্দি রাখা যাবে না। আমরা এই শিকল ভাঙবই। খ্রিস্টানদের রক্ত দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার ঔদ্ধত্যের মূল্য চোকাতে হবে।' এদিকে চিঠিতে অনেক ইহুদি বিরোধী কথা লেখা ছিল। এই পরিস্থিতি অনেক আমেরিকানই পোস্টটির ‘প্রশংসা’ করায় বিতর্ক বাড়ে। এই পোস্টে এক জন লেখেন, ‘চোখ খুলে দিয়েছে’। অপর একজন লেখেন, ‘আমাদের সারা জীবন মিথ্যা বলা হয়েছে। আমার মনে আছে, ওসামাকে খুঁজে বের করে হত্যা করার পর, মানুষ উল্লাস করেছিল। কিন্তু, এখন মনে হচ্ছে সবটাই মিথ্যা ছিল।’
আরও পড়ুন: ডিএ বাড়িয়েও সরকারি কর্মীদের খুশি করা গেল না, 'একলাখি' চাপের মুখে মোদী
৭ অক্টোবর সকাল সকাল হাজার হাজার রকেট গাজা ভূখণ্ড থেকে উড়ে এসেছিল দক্ষিণ ইজরায়েলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ইজরায়েলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। হামাস জঙ্গিরা সীমান্তের বেড়া কেটে ইজরায়েলে ঢুকে পড়ে। অমানবিক তাণ্ডব চালায় তারা। সাধারণ মানুষকে বাড়িতে ঢুকে ঢুকে খুন করে হামাসের বন্দুকবাজরা। সঙ্গে অনেককেই অপহরণ করে তারা। এরপর ইজরায়েলও পালটা জবাবি হামলা চালিয়েছে। তাতে গাজায় মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের।
সাম্প্রতিককালে গাজায় যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। জানা গিয়েছে, ইজরায়েলি সেনার ক্রমাগত আক্রমণ এবং অবিরাম বোমা বর্ষণের জেরে বিধ্বস্ত গাজা। রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলি হামলায় ১১ হাজার ১০০ জন প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। তার মধ্যে ৪,৬০০ জনেরও বেশি শিশু। এদিকে 'দ্য টাইমস অফ ইজরায়েল'-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন ইজরায়েলি সেনার মৃত্যু হয়েছে। এই যুদ্ধ চলাকালীন এখনও পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। এই সবের মাঝেও যুদ্ধ বিরতিতে যেতে নারাজ ইজরায়েল। গাজায় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেখানকার কবরস্থানগুলিতে আর জায়গা নেই। গাজার অনেক জায়গাতেই গণকবর খোঁড়া হচ্ছে। এই আবহে দেহ সংরক্ষণ করতে আইসক্রিম ট্রাক ব্যবহার করা হচ্ছে।