মণিপুর ইস্যুতে লোকসভায় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে চেপে ধরল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। বাদল অধিবেশনের শুরুতেই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছেন বিরোধীরা। সূত্র মারফত এমনই খবর মিলেছে। সূত্রের খবর, সংসদের নিম্নকক্ষে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার বিষয়ে একমত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস-সহ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সব দল। সেটা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ২০০৩ সালের পর এই প্রথমবার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে বিরোধীরা। সেইসময় অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তবে হই-হট্টগোলের জেরে আজ দুপুর দুটো পর্যন্ত লোকসভা মুলতুবি হয়ে গিয়েছে। রাজ্যসভাতেও অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে বিরোধী জোট। আপাতত তুমুল হইচইয়ের মধ্যে সংসদের উচ্চকক্ষে অধিবেশন চলছে। যা পরিস্থিতি, তাতে সেই অধিবেশনও শীঘ্রই মুলতুবি হয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।
এমনিতে এবার সংসদের বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই চাপে আছে মোদী সরকার। গত মে থেকে মণিপুর জ্বললেও দিনকয়েক আগে বর্বরোচিত কাণ্ডের ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরই দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। যে ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, দুই কুকি মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো হচ্ছে। ঘটনায় মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তার জেরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিজেপি সরকার। ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর কয়েক সেকেন্ডের জন্য সংসদ চত্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদী মুখ খুললেও তাতে সন্তুষ্ট নন বিরোধী নেতারা। বরং সংসদের উভয়ে কক্ষেই প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবি তুলেছেন তাঁরা। যদিও মোদী যে সেই পথে হাঁটবেন, তেমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
সেই পরিস্থিতিতে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে মঙ্গলবার সকালে বৈঠকে বসেন 'ইন্ডিয়া' জোটের নেতারা। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের ঘরে সেই বৈঠকে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে মণিপুর নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে মোদীর বিবৃতির দাবিতে আরও সরব হবেন। আরও জোরদার আন্দোলন করা হবে। আম আদমি পার্টির (আপ) সাংসদ সঞ্জয় সিংকে যে এবারের বাদল অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে, তাও প্রত্যাহারের দাবিতে সরকারের উপরের চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপ সাংসদের দাবি, মণিপুর নিয়ে মোদীর বিবৃতির দাবি করায় তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে সরকারপক্ষের দাবি, বারবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করেন সঞ্জয়।
তারইমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এমনিতে লোকসভায় বিজেপির হাতে যে সংখ্যা আছে, তাতে অনাস্থা প্রস্তাবে কোনও সমস্যা হবে না মোদী সরকারের। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাব এনে মনস্তাত্ত্বিক চাল দিতে চাইছেন বিরোধীরা। সেইসঙ্গে দেশের মানুষের কাছে একটি বার্তা দিতে চাইছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।