ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ অসম বা আলফার সঙ্গে শুক্রবার ত্রিপাক্ষিক শান্তি চুক্তি সই করল সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে এই চুক্তি হয়। আলফার চেয়ারপার্সন অরবিন্দ রাজখাওয়া, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্র, অসম সমরকার এবং আলফার এঅ ত্রিপাক্ষিক শান্তি চুক্তির প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অমিত শাহকে ট্যাগ করে মোদী লেখেন, 'শান্তি ও উন্নয়নের দিকে অসমের যাত্রায় আজকের দিনটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই চুক্তি অসমের দীর্ঘস্থায়ী অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করবে। আমি এই যুগান্তকারী অর্জনের সাথে জড়িত সকলের অবদান এবং প্রচেষ্টার প্রশংসা করতে চাই। একই সাথে, আমরা সকলের জন্য ঐক্য, বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব।'
এদিকে অমিত শাহ এই শান্তি চুক্তিকে 'সোনালি দিন' বলে আখ্যা দিয়েছেন। অসমে ১৯৭৯ সাল থেকে অন্তত ১০,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন আলফার হিংসাত্মক কার্যকলাপের জেরে। এই আবহে আলফা শান্তি চুক্তি এই অঞ্চলের শান্তির পক্ষে বড় পদক্ষেপ। শাহ গতকাল জানান, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই দিল্লি ও উত্তরপূর্বের মধ্য়ে শূন্যস্থান পূরণের ব্যাপারে সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। শাহের কথায়, গত পাঁচ বছরে ৯টি শান্তি ও সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। এর জেরেই উত্তর পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে তৈরি হয়েছিল এই আলফা। আপার অসমের ২০ জন যুবক তৈরি করেছিল এই গোষ্ঠী। কার্যত স্বাধীন অসমের দাবিতে একেবারে সশস্ত্র যুদ্ধে নেমে পড়েছিল তারা। এরপর এলাকায় শান্তি ফেরাতে একাধিকবার সরকারের সাথে আলোচনায় বসেছিল তারা। পরে দুই ভাগে বিভক্ত হয় এই গোষ্ঠী। আলফার একটি অংশ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সূত্র বের করার পক্ষে সওয়াল করে। আর পরেশ বড়ুয়ার গোষ্ঠী সশস্ত্র থাকার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। এই আবহে এবার আলোচনাকামী পক্ষের সঙ্গে গতকাল শান্তিচুক্তি সই করেছে সরকার।
এদিকে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, অসমের উন্নতিতে অনুপ্রবেশকারী রুখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র। এ ছাড়াও আলফা নেতৃত্বকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমির পাট্টা দেওয়া এবং অসমের উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অসমে বিদেশি শনাক্তকরণের ভিত্তিবর্ষ ১৯৫১ সাল করার শর্ত রাখা হয়েছিল আলফার তরফে। এই বিষয়টি শান্তিচুক্তিতে আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এদিকে এই শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করেছে আলফার পরেশ বড়ুয়া গোষ্ঠী। তবে গতকালকের শান্তিচুক্তির পর অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, 'আমার মনে হয় শীঘ্রই পরেশ বড়ুয়াও শান্তি আলোচনার টেবিলে বসেতে পারেন।' উল্লেখ্য, দাবি করা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টে চিনে পালিয়ে গিয়েছিলেন পরেশ। এখন চিন-মায়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি কোথাও থাকেন তিনি। এদিকে কংগ্রেস প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, পরেশের গোষ্ঠীকে নিয়েই যেন শান্তি আলোচনা করা হয়।