শহুরে জীবনযাত্রায় দুঃখ, ক্রোধ বা ভয়ের অনুভূতি মানুষকে বেশ পীড়া দেয়৷ কিন্তু প্রকৃতির কোলে গেলে স্ট্রেস কমে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বেড়ে যায়৷ এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় শহর ও জঙ্গলে মানুষের অনুভূতির পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞানের খাতিরে তিনটি মানুষ এক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন৷ তাকিয়ে দেখা, শব্দ শোনা এবং ত্বকের উপর বাতাসের ছোঁয়া টের পাওয়াই তাদের দায়িত্ব৷ কেভিন রোসারিও ও ড. রেচেল ও তাদের পর্যবেক্ষণ করেন৷
প্রকৃতি কীভাবে শরীর ও মনের উপর প্রভাব রাখে, এই দুই গবেষক তা স্পষ্ট দেখাতে চান৷ মনোবিজ্ঞানী হিসেবে কেভিন রোসারিও প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বিশেষ করে উদ্বেগের লক্ষণ ও স্ট্রেস কীভাবে কমে যাচ্ছে, আমরা সে দিকে নজর রাখছি৷ সেইসঙ্গে মনোযোগের ক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব৷ একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, স্ট্রেস কিন্তু নানা রকম কার্ডিওভাসকুলার রোগের কারণ হতে পারে৷’’
গবেষকরা ছোট ছোট দলে স্বেচ্ছাসেবীদের শহরের উপকণ্ঠে এক জঙ্গলে নিয়ে গেছেন৷ বিশেষ পরিমাপ যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁদের হৃদস্পন্দনের ওপর নজর রাখা হয়েছে৷ ড. রেচেল ও জানালেন, ‘এই যন্ত্র আসলে হৃদস্পন্দন পরিমাপ করে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটির পরিবর্তন চিহ্নিত করে৷ তখন আমরা সেই মানুষের স্ট্রেসের অনুভূতি টের পাই৷ কারণ হৃদস্পন্দনের হার যত কম হয়, স্ট্রেসের মাত্রা তত কম এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ তত বেশি হয়৷ তারপর জঙ্গলে থাকলে এবং সেখানে না থাকলে দুই অবস্থার মধ্যে তুলনা করতে পারি৷’
বিজ্ঞানীদের হাতে প্রাথমিক তথ্য ইতোমধ্যেই এসে গিয়েছে৷ যেমন এক স্বেচ্ছাসেবীর ক্ষেত্রে জঙ্গলে হৃদস্পন্দন স্পষ্ট কমে গেছে৷ স্বাচ্ছন্দ্যবোধই এর কারণ বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ আরও একটি বিষয় পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ মুখের লালার মধ্যে কর্টিসল হরমোন পরিমাপ করে স্ট্রেসের মাত্রা জানা যায়৷ সেই মাত্রা যত কম হয়, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ ততই বেশি হয়৷
কিছু পরীক্ষার ফলের দিকে তাকালে একটা চিত্র উঠে আসে৷ লাল ও সবুজ মোটা রেখা প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার আগের ও পরের অবস্থা ফুটিয়ে তুলছে৷ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কর্টিসলের মাত্রা কমে গেছে৷ অর্থাৎ সব স্বেচ্ছাসেবীই জঙ্গলে প্রবেশ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন৷
ঠিক কোন ধরনের জঙ্গলে মানুষ প্রবেশ করছে, তাতে কিছু এসে যায় না৷ গবেষকরা একবার জীববৈচিত্র্যে ভরা একটি জঙ্গলে পরিমাপ চালিয়েছিলেন৷ তারপর অপেক্ষাকৃত কম বৈচিত্র্যের দুটি জঙ্গলেও একই কাজ করেছিলেন৷ এমনকি শহরের মধ্যে, সবুজের একেবারে কোনও ছোঁয়া ছাড়াই জায়গায় মানুষ বসে থেকেছেন৷ কিন্তু পরীক্ষার ফল ছিল সত্যি বিস্ময়কর৷ সব ক্ষেত্রেই কর্টিসলের মাত্রা কমেছে৷ রোসারিও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কেউ বলতেই পারেন, যে ২০ মিনিট ধরে বসে আরাম করে কিছুটা শান্তি পেয়ে সত্যি কাজ হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও কিন্তু আমাদের মনে বিস্ময় দূর হয় নি৷ জঙ্গল ও শহরের পরিবেশের মধ্যে কোনো পার্থক্যই নেই, সেটি কী করে সম্ভব!’
কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যবোধের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পার্থক্য চোখে পড়েছে৷ প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়৷ যেমন প্রশ্ন করা হয়েছিল, শহরে অথবা জঙ্গলে দুঃখ, ক্রোধ বা ভয়ের অনুভূতি কেমন ছিল? কেভিন রোসারিও জানালেন, ‘জঙ্গলে উদ্বেগের লক্ষণ সত্যি অনেক কম ছিল৷ মানুষের মধ্যে আরও ইতিবাচক মনোভাব, অনেক কম নেতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে৷ মনোযোগের ক্ষমতারও উন্নতি হয়েছে, এমনটাও মনে হচ্ছে৷’ আরও এক বছর ধরে গবেষণা চলবে৷ তবে প্রাথমিক ফলাফল এখনই দেখিয়ে দিচ্ছে যে বিশ্রাম নিলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধের মাত্রা বেড়ে যায়৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)