শরণ পোভান্না
দেশের বেসরকারি কলেজে মেডিকেল পড়তে প্রচুর খরচ। অথচ ইউক্রেনের মতো দেশে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। সেজন্য মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রচুর ছেলেমেয়ে সেখানে পাড়ি দেন। সেই কারণেই খারকিভে গিয়েছিলেন কর্নাটকের ছেলে নবীন শেখারাপ্পাও (২১)। ছেলেকে হারানোর পর সেই 'ডোনেশন' রাজে ইতি টানার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের কাছে আর্জি জানালেন নবীনের বাবা।
বছরকয়েক আগে ইউক্রেনের খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হয়েছিলেন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নবীন। ক্লাসের ‘টপারও’ ছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই চলছিল। কিন্তু পশ্চিমী দুনিয়ার পদক্ষেপ এবং দুই পড়শি দেশের দ্বন্দ্বে সবকিছু পালটে গেল। মঙ্গলবার সকালে ফ্ল্যাটের কাছেই একটি দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে গোলাবর্ষণে প্রাণ হারান নবীন। কর্নাটকে সেই খবর পৌঁছানোর পর থেকে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে নবীনের পরিবার।
নবীনের বাবা শেখারাপ্পা বলেন, ‘আমাদের ছেলের দেহ ফিরিয়ে আনার জন্য সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে সকল উচ্চপদস্থ আধিকারিক, দূতাবাস, প্রধানমন্ত্রীকে আর্জি জানাচ্ছি।’ সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সকল রাজনৈতিক নেতাকে এই বিষয়টির দিকে নজর দেখা আর্জি জানাচ্ছি। এই ডোনেশনের বিষয়টা অত্যন্ত জঘন্য। মেধাবী পড়ুয়ারা বিদেশে পডতে চলে যাচ্ছে। ওরা যদি এখানে পড়তে চায়, তাহলে ভরতি হওয়ার জন্য কোটি-কোটি টাকা দিতে হবে। বিদেশে একই মানের বা এখানের থেকে ভালো মানের শিক্ষা পাচ্ছে। প্র্যাকটিকালের যন্ত্রপাতিও যথেষ্ট ভালো মানের। ভারতে শুধুমাত্র টাকার ভিত্তিতে আসন দিচ্ছে। আমার ছেলে প্রি-ইউনিভার্সিটিতে ৯৭ শতাংশ পেয়েছিল।’ একটি বেসরকারি কারখানায় কাজ করতেন শেখারাপ্পা। বড় ছেলে ডাক্তারি নিয়ে পড়ছেন।
তবে শুধু নবীন নয়, খারকিভে তাঁর ফ্ল্যাটের দুই সঙ্গীও একই কারণে ইউক্রেনে মেডিকেল পড়তে গিয়েছেন। খারকিভ থেকে ফোনে 'হিন্দুস্তান টাইমস'-কে সুমন বৈশ্বনভর বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের। (ভারতের বেসরকারি) মেডিকেল কলেজে দেড় থেকে দু'কোটি টাকার ডোনেশন দিতে পারব না। তাই আমরা (সঙ্গে আছেন সুমনের ভাই অমিতও) টাকা জোগাড় করে এখানে এসেছি।’ তাঁরা দু'জন এখন কার্যত অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। নবীনের মৃত্যুর পর ভুগছেন আতঙ্কে। অমিতরা জানিয়েছেন, বাড়ি বা বাঙ্কার কোথাও সুরক্ষিত নেই তাঁরা। পাগলের মতো সাহায্যের আর্তি জানাচ্ছেন। ভারতীয় দূতাবাসের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, দূতাবাসের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে তিনটে নাগাদ একটি টুইটবার্তায় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা নিশ্চিত করতে পারছি যে আজ সকালে খারকিভে গোলাবর্ষণে এক ভারতীয় পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। মৃত পড়ুয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে বিদেশ মন্ত্রক। পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’ সঙ্গে তিনি বলেছেন, 'খারকিভ-সহ যে সব জায়গায় সংঘাত হচ্ছে, সেখানকার ভারতীয়দেের দ্রুত সুরক্ষিতভাবে যেতে দেওয়ার দাবি আরও জোরালোভাবে জানানোর জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দূতকে তলব করেছেন বিদেশসচিব। রাশিয়া এবং ইউক্রেনে আমাদের রাষ্ট্রদূতরাও একই পদক্ষেপ করেছেন।'