হিন্দু ধর্মে বিয়ের পর নারীদের কপালে সিঁদুর পরার ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে, সিঁদুর বিবাহিত হওয়ার লক্ষণ। সিঁদুর পরাও তাই মহিলাদের কর্তব্য! আর না পরলে নিষ্ঠুরতা। সম্প্রতি, কোর্টে মামলা চলাকালীন একজন মহিলাকে অবিলম্বে তাঁর স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়ার সময় 'সিঁদুর' সম্পর্কে এমনই বিবৃতি দিয়েছে আদালত। হিন্দু বিবাহ আইনের অধীনে এই মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি, পাঁচ বছর আগে যাঁর স্ত্রী সংসার ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই মামলার শুনানির সময়ই মধ্যপ্রদেশেরই ন্দোরের পারিবারিক আদালতের প্রধান বিচারক এনপি সিং-এর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সিঁদুর পরা একজন বিবাহিত হিন্দু মহিলার 'ধর্মীয় কর্তব্য'।
- 'সিঁদুর না পরা নিষ্ঠুরতার সমান'
আদালত গত এক মার্চ ওই নারীকে স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে একটি ডিক্রি জারি করেছিল।
আইনজীবী শর্মা আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন যে স্ত্রী পাঁচ বছর ধরে আলাদা বসবাস করছেন এবং বিবাহিত হলেও সিঁদুর লাগানো বন্ধ করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সময়ও স্ত্রী সিঁদুর লাগাননি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্ত্রী স্বীকার করেছিলেন, যেহেতু তিনি আলাদা থাকছেন, তাই তিনি সিঁদুর লাগানো বন্ধ করে দিয়েছেন। আদালত শর্মার যুক্তিতে একমত হয়েছে এবং স্বামীর পক্ষে আদেশ জারি করেছে। বলেছে, ডিভোর্স হবে না। ওই স্ত্রীকে নিজের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে হবে। এর প্রেক্ষিতেই কোর্টের দাবি, সিঁদুর স্ত্রীর ধর্মীয় দায়িত্ব, এটি এবং এটি ওই মহিলার বিবাহিত হওয়ার প্রমাণ দেয়।
- কোনও কারণ ছাড়াই গত পাঁচ বছর ধরে স্বামীকে ত্যাগ করেছেন স্ত্রী
উল্লেখ্য, এই দম্পতি ২০১৭ সালে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁদের পাঁচ বছরের এক ছেলেও রয়েছে। এদিকে আবেদনকারী পবন যাদব হিন্দু বিবাহ আইনের ধারা নয় এর অধীনে দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য অ্যাডভোকেট শুভম শর্মার মাধ্যমে পারিবারিক আদালতে আবেদন করেছিলেন। আবেদনে বলা হয়েছিল, কোনো কারণ ছাড়াই স্বামীকে পাঁচ বছর আগে ত্যাগ করেছেন স্ত্রী। ডিভোর্স চেয়ে মামলা ঠুকেছেন। অথচ স্ত্রী তাঁর জবানবন্দিতে স্বামীর নেশায় মত্ত থাকা, বোরখা পরার জন্য তাঁকে হয়রানি করা, যৌতুকের দাবির মতো অনেক অভিযোগ টেনে এনেছেন। এককথায়, স্বামীর বিরুদ্ধে ‘যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক হয়রানির’ অভিযোগ এনে বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ওই মহিলা।
এদিকে, রেকর্ডে থাকা উপকরণগুলি দেখে এবং উভয় পক্ষের শুনানির পরে, আদালত বলেছে যে 'মহিলা তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও পুলিশ অভিযোগ বা প্রতিবেদন জমা দেননি।"
- আদালত ১১ পৃষ্ঠায় রায় দিয়েছে
১১ পৃষ্ঠার রায়ে, আদালত গৌহাটি হাইকোর্টের একটি আদেশও উল্লেখ করেছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, স্বামী স্ত্রীকে ত্যাগ করেননি কিন্তু স্ত্রী নিজের ইচ্ছায় স্বামীর কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করেছেন। কোনও বৈধ কারণ ছাড়াই স্বামীকে ত্যাগ করেছেন। আর একজন স্ত্রীয়ের সিঁদুর না পরা এক ধরনের নিষ্ঠুরতা।