জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এভারেস্ট অভিযাত্রীরা নিত্যনতুন সমস্যায় পড়ছেন৷ বরফ গলায় একদিকে বাড়ছে পাহাড় চড়ার ঝুঁকি, অন্যদিকে, আবর্জনা ও বর্জ্যের দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে৷
এভারেস্টের পশ্চিম ঢালের খুম্বু তুষারপ্রপাতকে পর্বতারোহীরা ডাকেন ‘মৃত্যুর নাচঘর' নামে৷ তলোয়ারের মতো ধারালো বরফ এই পথকে আরো বিপজ্জনক করে তোলে৷
দুর্ঘটনাও ঘন ঘন ঘটে সেই অঞ্চলে৷ দশ বছর আগে, ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল, তুষারের বড় চাঁই ভেঙে পড়ায় প্রাণ হারান ১৬জন নেপালি পর্বতারোহী৷ সেই থেকে এই ধরনের তুষারপ্রপাত অভিযানে পটু, এমন কয়েকজন শেরপা মিলে গড়েন ‘আইসফল ডক্টরস' নামের সংগঠন৷ এভারেস্টের পথকে যতটা সম্ভব এই বিপজ্জনক পশ্চিম ঢালু থেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন তারা৷
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবারের বসন্তে এই পথকে আবার সরিয়ে নিয়ে গেছে সেই মৃত্যুর নাচঘরের কাছেই৷ কম ঝুঁকিপূর্ণ পথ খুঁজতে ব্যর্থ হন শেরপারা৷ পর্যপ্ত তুষারপাত না হওয়ায় রাস্তা পিচ্ছিল হয়, পাথরের ফাঁকের গহ্বরগুলি আরো বড় হওয়ায় মইয়ের সাহায্যে তা পেরোনো অসম্ভব ছিল৷
প্রতি বছর, আইসফল ডক্টরসের শেরপারা দড়ি ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে মে মাসের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এমন পোক্ত পথ তৈরি করেন৷ কিন্তু তবুও, শেরপারা সতর্ক করে বলেন যে এই পথে রয়েছে পাঁচটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট, যা পেরোতে পারা প্রায় রাশিয়ান রুলেট খেলার মতোই৷
তুষারহীন এভারেস্ট, অর্থাৎ..
পাঁচ হাজার ৮০০ মিটার উচ্চতার অঞ্চলগুলিতেও তুষারের ছিঁটেফোঁটা নেই, যা চিন্তার বিষয়, বলেন তুষারপ্রবাহ বিশেষজ্ঞ তেনজিং চোগিয়াল শেরপা৷ তার মতে, ‘পরিসংখ্যান বলছে তুষারপাত হয় যে দিনগুলিতে, সেই সংখ্যা ও তুষারের পরিমাণে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে৷ এমন নগ্ন পাহারের চূড়াই বোঝাচ্ছে আসলে কী হচ্ছে৷'
হিমবাহ গলার হারও বেড়েছে৷ ফলে, বরফ গলে জল জমছে হ্রদে, সেই চাপে ফেটে পড়ছে তাদের বাঁধও৷ এভারেস্টের পাদদেশেও জমছে বরফ গলা জল৷ এর ফলে, পাহাড় থেকে পাথর ভেঙে পড়াও বেড়েছে, বাড়ছে তুষারধসের ঝুঁকিও৷
শেরপার সতর্কতা, ‘এমন তুষারধসে বহু মানুষ প্রাণ হারান৷ পাহাড় আরো বিপজ্জনক, পরিবর্তনশীল হয়ে পড়ছে৷'
পাহাড়ে চড়ার সুযোগ কমছে
২০২৩ সালের বসন্তে ১৮জন এভারেস্ট অভিযানে মারা যান৷ এতজন অভিযাত্রী এর আগে এত কম সময়ে মারা যাননি৷ কিন্তু সেই বছর সবচেয়ে বেশি ৪৭৮টি পাহাড়ে চড়ার অনুমতি বা পারমিট দিয়েছিল নেপাল সরকার৷ ২০২৪ সালে গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কম পারমিট দেওয়া হয়েছে৷
কিন্তু তাতেও কমবে না এভারেস্ট পাড়ি দেওয়া মোট যাত্রীদের সংখ্যা৷ চীনা অংশেও সেখানকার সরকার সর্বোচ্চ পারমিটের সংখ্যা তিনশতে বেঁধে দিয়েছে৷ সাথে, বাধ্যতামূলকভাবে অক্সিজেন ট্যাংক রাখার নিয়মও চালু করেছে তারা৷
ট্র্যাকিং চিপ ও বর্জ্যের ব্যাগ চালু
নেপালের দক্ষিণাঞ্চলেও চালু হয়েছে কিছু নতুন নিয়ম৷ বাধ্যতামূলকভাবে নিজেদের জ্যাকেটে ট্র্যাকিং চিপ লাগাতে হবে পর্বতারোহীদের৷ তাতে হারিয়ে যাওয়া পর্বতারোহীদের খুঁজতে সুবিধা হবে৷
এবছর প্রথমবারের জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে বর্জ্যের ব্যাগ সাথে রাখা, যাতে ভরে সব বর্জ্য নিয়ে আসতে হবে পর্বতারোহীদের৷ মলত্যাগ করার পর সেই বর্জ্য নিয়ে আসার জন্য রয়েছে বিশেষ সিল করা ব্যাগ, যার গায়ে লাগানো বিশেষ পদার্থ দুর্গন্ধকে ঠেকাবে৷
নেপালের সাগরমাথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি (এসপিসিসি) এসব নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত৷ এসপিসিসি জানাচ্ছে, এভারেস্টের ক্যাম্প ওয়ান থেকে ক্যাম্প ফোরের মাঝের এলাকা থেকে সাধারণত তিন টন জৈবিক বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়৷ এই এলাকায় সেই বর্জ্য বিকট দুর্গন্ধ ছড়াতো, যা নতুন ব্যাগের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে আশা করছেন তারা৷