রক্তাক্ত মণিপুরের অমানবিক এক ঘটনার ভিডিয়ো সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দু'জন মহিলা একেবারে নগ্ন অবস্থায় রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। অভিযোগ, ওই দুই মহিলাকে মাঠের মধ্যে গণধর্ষণও করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল গত ৪ মে। সেই ঘটনায় এবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এই নিয়ে একটি টুইট করেন বিজেপি সাংসদ। তাতে তিনি লেখেন, 'মণিপুরে ২ জন মহিলার যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ যে ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তা নিন্দনীয় এবং সম্পূর্ণ অমানবিক।' স্মৃতি জানান, এই ঘটনা নিয়ে তিনি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্মৃতি টুইট বার্তায় লেখেন, 'মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং আমাকে জানিয়েছেন যে ঘটনার তদন্ত চলছে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সবকিছু করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।'
এদিকে জানা গিয়েছে, ভাইরাল ভিডিয়োর ঘটনাটি ঘটে ইম্ফল থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে কাংপোকপি জেলায়। পুলিশের এফআইআর অনুযায়ী, সেই ঘটনায় নির্যাতিতা মহিলাদের পরিবারের দুই সদস্যকেও খুন করা হয়েছিল। এফআইআরে বলা হয়েছে, ৪ মে এক কুকি পরিবারের ৫ সদস্য আতঙ্কে বনে লুকিয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ৫৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। তারপর তিনজন নারীকে নগ্ন করিয়ে হাঁটানো হয়। ২১ বছর বয়সি এক মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তিন মহিলা কোনওরকমে পালিয়ে যান। ২১ জুন অভিযোগ দায়ের করা হয় পুলিশে।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অভিযোগ উঠেছে কুকি ‘জঙ্গিরা’ অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই আবহে কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে সেই রাজ্যে।
প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছে যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এই আবহে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই আবহে গত এপ্রিল মাসে এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ।