রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ঢুকে আছে বর্ণবাদ, লিঙ্গবিদ্বেষ- একটি স্বতন্ত্র কমিশনের রিপোর্ট সামনে আসতেই নিঃশর্ত ক্ষমা চাইল ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। মঙ্গলবার ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারপার্সন রিচার্ড থম্পসন জানিয়েছেন, যাঁরা এরকম বিদ্বেষের শিকার করেছেন, তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন। ভবিষ্যতে যাতে একজনকেও সেরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে না হয়, সেজন্য যাবতীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারপার্সন। যদিও যে দেশের ক্রিকেট ব্যবস্থার শিরায়-শিরায় বর্ণবাদ ঢুকে আছে, লিঙ্গবৈষম্য ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে এবং পুরো বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, সেই ক্রিকেট ব্যবস্থা কতটা পরিষ্কার হবে, তা নিয়ে ধন্দ আছে সংশ্লিষ্ট মহলের।
২০২০ সালে পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার আজিম রফিকের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ সামনে আসার পর যে 'ইন্ডিপেন্ডেট কমিশন অফ ইক্যুইটি ইন ক্রিকেট' তৈরি করেছিল, সেই কমিটির রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ক্রিকেট থেকে বর্ণবিদ্বেষ এবং লিঙ্গবৈষম্যকে মুছে ফেলতে যথেষ্ট পদক্ষেপ করেনি ইংল্যান্ড বোর্ড। বরং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে সেই বর্ণবিদ্বেষ 'গেঁথে বসে আছে'। মহিলা ক্রিকেটারদের 'দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক' হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিভিন্ন স্তর থেকে ৪,০০০-র বেশি মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। অর্ধেকের বেশি মানুষই গত পাঁচ বছরে বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সেই বিদ্বেষের ধরন নিয়ে আরও গভীরে যে ছবিটা ধরা পড়েছে, তা ভয়াবহ। কারণ ৮৭ শতাংশ পাকিস্তান বা বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত মানুষই সেই বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। যা ভারতে শিকড় থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ৮২ শতাংশ, কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬৮ শতাংশ।
তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে বিদ্বেষের সেখানেই শেষ হয়নি। ওই কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সাদা বলের ক্রিকেটে (অর্থাৎ ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফর্ম্যাটে) ইংল্যান্ডের মহিলা ক্রিকেটাররা সাধারণত যে টাকা পান, তা পুরুষ ক্রিকেটারদের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ একই ফর্ম্যাটে খেলে মহিলা ক্রিকেটারদের থেকে পাঁচগুণ বেশি টাকা পান ইংল্যান্ডের পুরুষ ক্রিকেটাররা। বর্তমানে যে বেতন সাম্য চালু করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
সেই পরিস্থিতিতে ওই কমিশনের রিপোর্টে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডকে মোট ৪৪টি সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডের জার্সি পরে খেলা পুরুষ এবং মহিলা ক্রিকেটারদের বেতনের ক্ষেত্রে সাম্য আনার বিষয়টিও সেই তালিকায় আছে। সেই প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড বোর্ডের তরফে দাবি করা হয়েছে যে কমিশনের তরফে যে ৪৪টি সুপারিশ করা হয়েছে, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্রীড়াজগতের প্রতিনিধিদের পরামর্শ নিয়ে তিন মাসের মধ্যে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
সেইসঙ্গে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের শিরায়-শিরায় বর্ণবিদ্বেষ ও লিঙ্গবৈষম্য থাকায় ক্রিকেট বোর্ডের তরফে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারপার্সন বলেছেন, 'যাঁদের কখনও মনে হয়েছে যে তাঁদের ক্রিকেটের মাঠে বহিরাগত করে দেওয়া হয়েছে বা তাঁদের অনুভব করানো হয়েছে যে তাঁরা এই ক্রিকেটের অংশ নন, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের তরফে তাঁদের কাছে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইছি। ক্রিকেট খেলাটা সকলের জন্য। কিন্তু আমরা জানি যে সবসময় সেটা হয় না। এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে যে দীর্ঘদিন ধরে মহিলা এবং কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের অবহেলা করে আসা হয়েছে। সেজন্য আমরা সত্যিই দুঃখিত।'
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।